প্রযুক্তি

‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে মিলবে যেসব সেবা

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া কর্মীদের জন্য ডিজিটাল সহায়তা হিসেবে চালু হয়েছে ‘আমি প্রবাসী’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ। এটি ব্যবহার করে প্রবাসীরা যেমন বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে পারেন, তেমনি বিদেশে অবস্থানকালে যে কোনো সমস্যায় দ্রুত সহায়তাও চাইতে পারেন। অ্যাপটি সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছে যাতে প্রবাসী শ্রমিকরা সহজে ও নির্ভরযোগ্যভাবে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

অ্যাপটি কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপটি মূলত একটি তথ্য ও সহায়তাভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। এটি প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনকে সহজ, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশে কর্মরত থাকাকালে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হন। অনেকেই সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন শুধুমাত্র তথ্যের অভাবে। আবার অনেকেই প্রতারিত হন ভিসা বা নিয়োগ নিয়ে দালালদের দ্বারা। এ ধরনের সমস্যা দূর করতে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপটি চালু করা হয়েছে।

অ্যাপ ডাউনলোড ও রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি

‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপটি বর্তমানে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য Google Play Store-এ পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাপটি ডাউনলোড করতে ব্যবহারকারীকে ‘আমি প্রবাসী’ লিখে সার্চ করে ইনস্টল করতে হবে।

ইনস্টল করার পর প্রথমবার অ্যাপটি খুললে ব্যবহারকারীকে নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর ও কর্মস্থলের দেশের তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর ফোন নম্বরে একটি ওটিপি (OTP) কোড পাঠানো হবে, যা দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে ব্যবহার শুরু করা যাবে।

‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে পাওয়া যাবে যেসব সেবা

১. ভিসা যাচাই

প্রথমত, প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে তাদের ভিসা বৈধ কি না তা যাচাই করতে পারবেন। এতে করে বিদেশে যাওয়ার আগে ভিসা নিয়ে প্রতারণার আশঙ্কা কমে যাবে। সরকারিভাবে ভিসা যাচাইয়ের এই সুবিধা নতুন ও পুরনো প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২. বিএমইটি নিবন্ধন

বিদেশে প্রথমবার পাড়ি জমাতে ইচ্ছুক কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বিএমইটি (বাংলাদেশ ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং ব্যুরো) নিবন্ধন। এই নিবন্ধন এখন অ্যাপ থেকেই করা যাবে। ফলে সময় বাঁচবে এবং দালালদের মাধ্যমে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়বে না।

৩. জরুরি সহায়তা ও অভিযোগ জানানো

বিদেশে অবস্থানকালে কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়লে প্রবাসীরা সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সহায়তার আবেদন জানাতে পারবেন। এতে সরকারি সহায়তা পাওয়া আরও সহজ ও দ্রুত হবে।

৪. নিকটস্থ দূতাবাস/কনস্যুলেটের তথ্য

যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। এই অ্যাপে ব্যবহারকারী তার অবস্থান অনুযায়ী কাছাকাছি অবস্থিত দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ঠিকানা, যোগাযোগ নম্বর ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।

৫. ফিরে আসা প্রবাসীদের জন্য পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ

যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তথ্যও অ্যাপে পাওয়া যাবে। এতে তারা আবারও কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে পেতে পারেন।

৬. প্রশ্ন-উত্তর ও পরামর্শ সেবা

প্রবাসী শ্রমিকদের সাধারণ বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যা নিয়ে এই অ্যাপে রয়েছে একটি জিজ্ঞাসা বিভাগ। যেখানে সাধারণ তথ্য, অভিজ্ঞ পরামর্শ ও নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফিচার

  • ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড/বিএমইটি কার্ড দেখা: অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের স্মার্ট কার্ড সংক্রান্ত সব তথ্য দেখা যাবে, যা বিদেশে পরিচয় যাচাইয়ে কাজে লাগে।
  • দালাল ও প্রতারকদের তথ্য জানানো: যদি কোনো দালাল বা প্রতারকের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে অ্যাপের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানানো যাবে।
  • ভাষাভিত্তিক সহায়তা: অ্যাপটি বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় ব্যবহারযোগ্য, ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষী প্রবাসীরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

কেন এই অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশ প্রতিবছর কয়েক লাখ কর্মী বিদেশে পাঠায়। তাঁদের নিরাপত্তা, অধিকার ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে সরকারের প্রচেষ্টায় এই প্রক্রিয়া অনেকটাই স্বচ্ছ, দ্রুত এবং দক্ষ হয়েছে।

বিশেষত, প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা কমাতে ও প্রতারণা প্রতিরোধে এই অ্যাপ একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অন্যতম সফল উদাহরণ এটি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে আরও কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হবে, যেমন:

  • লাইভ চ্যাট সুবিধা বিদেশে অবস্থানরতদের তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের জন্য।
  • স্থানীয় ভাষাভিত্তিক ভিডিও গাইডলাইন যাতে কর্মীরা সহজে সব নির্দেশনা বুঝতে পারেন।
  • নিয়োগদাতা কোম্পানির রেটিং ও রিভিউ ব্যবস্থা যাতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button