প্রযুক্তি

“এভারেস্ট অভিযানে বিপ্লব আনছে ড্রোন: শেরপাদের সঙ্গে প্রযুক্তির যুগলবন্দি”

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট বরাবরই রোমাঞ্চ ও মৃত্যুর একত্র সহাবস্থানের প্রতীক। প্রতি বছর হাজারো অভিযাত্রী এই দুর্গম গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণপণ লড়াই করেন। তবে আধুনিক প্রযুক্তি এবার তাঁদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। হিমবাহ, পাথর ও হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মাঝে এখন ভরসার নাম — ড্রোন।

নেপালের মিলান পাণ্ডে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এভারেস্ট অভিযানে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। তিনি বেজক্যাম্পে বসেই ড্রোন চালিয়ে মই, দড়ি ও অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠাচ্ছেন দুর্গম উচ্চতায়। তাঁর এই কার্যক্রম অভিযাত্রী ও শেরপাদের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।

ড্রোনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার

এভারেস্ট অভিযানে সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশগুলোর একটি হলো খুম্বু আইসফল। এটি বেজক্যাম্প ও ক্যাম্প ওয়ানের মাঝখানে অবস্থিত এক বিশাল বরফের ঝরনা, যেখানে প্রতিনিয়ত বরফ ধসে পড়ে এবং পথচলা অত্যন্ত কঠিন ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

এমন জায়গায় প্রতিনিয়ত অক্সিজেন, রশি ও মই সরবরাহ করতে গিয়ে বহু শেরপা তাদের জীবন হারিয়েছেন। এখন ড্রোনের মাধ্যমে সেই সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে নিরাপদভাবে, যা এ যাবৎ দেখা যায়নি।

মিলান পাণ্ডে ও এয়ারলিফট টেকনোলজি

মিলান পাণ্ডে নেপালের স্থানীয় ড্রোন প্রযুক্তিভিত্তিক একটি স্টার্টআপ এয়ারলিফট টেকনোলজি-এর একজন প্রধান প্রতিনিধি। তাঁর লক্ষ্য, শেরপাদের অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে একত্র করে পর্বতারোহণকে আরও নিরাপদ করা। তিনি বলেন,

“ড্রোনের মাধ্যমে সরবরাহ ও ম্যাপিং করা গেলে পর্বতারোহীদের ও শেরপাদের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। শারীরিক চাপও কমবে, যা উচ্চতাজনিত অসুস্থতা কমাতে সাহায্য করবে।”

সাত দশকের অভিজ্ঞতা বনাম প্রযুক্তি

পর্বতারোহণে সহায়তায় শেরপাদের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। সাত দশক ধরে তারা এভারেস্টের জন্য পথ তৈরি করছেন, সরঞ্জাম বহন করছেন এবং অভিযাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করছেন। তবে বিপজ্জনক রুটে এই কাজ করতে গিয়ে বহু শেরপা প্রাণ হারিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে ড্রোন প্রযুক্তি যদি দায়িত্বের একটা অংশ ভাগ করে নেয়, তবে শেরপাদের নিরাপত্তা যেমন বাড়বে, তেমনি অভিযাত্রীদের অভিযান হবে আরও সুশৃঙ্খল।

অভিযাত্রার ভবিষ্যৎ কী বলছে?

বিশ্বজুড়ে পর্বতারোহণে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তবে এভারেস্টের মতো দুর্গম চূড়ায় ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ এখনো বিরল। মিলান পাণ্ডে ও তাঁর দল এই দৃষ্টান্ত গড়ছেন। ভবিষ্যতে অভিযানের প্রস্তুতি, বিপদসংকেত বা উদ্ধারকাজেও ড্রোন হতে পারে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার।

যদিও চূড়ান্ত উচ্চতায় ড্রোন চালানো এখনো এক বিশাল চ্যালেঞ্জ — কম বায়ুচাপ, তীব্র ঠান্ডা ও ব্যাটারির স্থায়িত্ব — তবুও প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button