বানিজ্য

সম্পূরক ঋণ চুক্তিতে ৭৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আধুনিক ও সমন্বিত নৌচালনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ৭৬ কোটি টাকা সম্পূরক ঋণ দিচ্ছে। ‘গ্লোবাল সামুদ্রিক বিপদ সংকেত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সমন্বিত নৌচালনা ব্যবস্থা স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এই অর্থায়ন করা হচ্ছে।

এই ঋণ দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল—ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)-এর মাধ্যমে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এই সম্পূরক ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি’র এশিয়া, জেইসি ও এফএন্ডএফ শাখার অতিরিক্ত সচিব মিজ মিরানা মাহরুখ এবং কোরিয়ার পক্ষে দেশটির এক্সিম ব্যাংকের ডিরেক্টর জেনারেল মি. কিম কিসাঙ্গ নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের মূল চুক্তিতে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদিত হয়েছে। নতুন এই ৭৬ কোটি টাকার সম্পূরক ঋণের মাধ্যমে প্রকল্পের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ও উপকারিতা

প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আধুনিক নৌ নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে ৭টি লাইট হাউজ, একাধিক কোস্টাল রেডিও স্টেশন এবং ঢাকায় একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করা হবে।

এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি, বর্তমানে ব্যবহৃত পুরনো লাইট হাউজগুলো আধুনিকীকরণ এবং নতুন লাইট হাউজ স্থাপন করা হবে যা সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অর্থনৈতিক দিক ও ঋণের শর্তাবলি

এই ঋণ চুক্তির আওতায় ইডিসিএফ-এর দেওয়া অর্থের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ০.০১ শতাংশ। ঋণটি পরিশোধের সময়সীমা রাখা হয়েছে ৪০ বছর, যার মধ্যে ১৫.৫ বছর হবে গ্রেস পিরিয়ড অর্থাৎ এই সময়কালে কোনো কিস্তি দিতে হবে না।

এ ধরনের নমনীয় শর্তাবলির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ পড়বে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে দেশের নৌপরিবহন ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা খাত।

কোরিয়ার সহযোগিতার ইতিহাস

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বিভিন্ন অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিলের মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে আসছে। এর আওতায় অবকাঠামো, পরিবহন, তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে একাধিক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে দেশটি।

এই ঋণ সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ইআরডি এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা খাতে এই প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শুধু নিরাপত্তা নয়, এই উদ্যোগ দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নৌচালনা ব্যবস্থাপনা গঠনে সহায়ক হবে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button