বানিজ্য

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৬.৭০ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২৬ হাজার ৭০২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন খান।

রিজার্ভ বৃদ্ধির ধারা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, বৈদেশিক রিজার্ভ গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাড়তির দিকে রয়েছে। এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা ১৩ তারিখে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। এরপর ১৫ এপ্রিল তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত তা পৌঁছেছে ২৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে।

এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি নির্দেশ করছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

বিপিএম-৬ অনুযায়ী নিট রিজার্ভের চিত্র

বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি, ব্যালান্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল ৬ (BPM6) অনুসরণ করে নিট রিজার্ভ হিসাব করছে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৪০ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তুলনামূলকভাবে, ১৫ এপ্রিল নিট রিজার্ভ ছিল ২১ হাজার ১৭৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার এবং ১৩ এপ্রিল তা ছিল ২১ হাজার ১১৪ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এর মানে হচ্ছে, নিট রিজার্ভেও বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়িয়েছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে কারণসমূহ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো—

  • রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক গতি: সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে, যা সরাসরি রিজার্ভে প্রভাব ফেলছে।
  • রপ্তানি আয় বৃদ্ধি: পণ্য ও সেবা রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
  • ব্যয় সংযম নীতি: সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনমূলক নীতি ও আমদানি হ্রাস রিজার্ভে চাপ কমিয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ঋণ প্রাপ্তি: উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান আসায় রিজার্ভে তাৎক্ষণিক সহায়তা এসেছে।

আইএমএফের শর্ত এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের সহায়তায় ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার আওতায় রিজার্ভ বজায় রাখা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে রিজার্ভ হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করা হয় শুধুমাত্র তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক সম্পদ দিয়ে, যেখানে স্বল্পমেয়াদি দায়সমূহ (যেমন সুদের পরিশোধ, আমদানি দায় ইত্যাদি) বাদ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করা নিট রিজার্ভ হিসেবে পরিচিত।

চ্যালেঞ্জ ও আশাবাদ

যদিও রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে সামনে এখনো রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি, ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশাবাদী যে বর্তমান গঠনমূলক নীতিমালা, রপ্তানি খাতের উন্নয়ন এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও শক্ত ভিত্তি পাবে।

রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছতা: রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে।
  • বিনিয়োগ ও রিটার্ন বৃদ্ধি: বৈদেশিক সম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • মানিলন্ডারিং ও অবৈধ হুন্ডি প্রতিরোধ: রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনার জন্য প্রণোদনা ও হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

উপসংহার

বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তির বার্তা। যদিও সাময়িক চাপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবুও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপরিকল্পিত নীতি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button