গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকসহ একই পরিবারের ১০ জন নিহত

গাজার রক্তাক্ত আকাশ যেন থামছেই না। ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক বিমান হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনি উপত্যকা। সবশেষ বুধবার (১৬ এপ্রিল) গাজা সিটিতে চালানো এক ভয়াবহ বিমান হামলায় একজন সাংবাদিকসহ একই পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এ ঘটনায় মৃতদের সবাই একই পরিবারের সদস্য। সাংবাদিক পেশাজীবীরাও আজ আর নিরাপদ নন। এই হামলার মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাতে নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের সংখ্যা ছাড়াল ২৩০।
নারী-শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ (ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স) গত ২৪ ঘণ্টায় চালিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি হামলা, যার ফলে প্রাণ হারিয়েছেন অতিরিক্ত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গাজার স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বোমা হামলা চালানো হয়েছে মূলত শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী তাঁবুগুলোর ওপর, যেখানে ঘরহারা মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতা এতটাই যে, এখন আর ‘ঘর’ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই উপত্যকায়।
খান ইউনিস, দেইর আল বালাহ, জাবালিয়ায় ভোররাতে হামলা
বৃহস্পতিবার ভোররাতেও শান্তি ছিল না গাজার আকাশে।
তেলআবিবের নির্দেশে খান ইউনিস, দেইর আল বালাহ ও জাবালিয়া এলাকায় চালানো হয় ধারাবাহিক বিমান হামলা।
এতে নতুন করে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তারা সবাই যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা, ঘরবাড়িহারা পরিবার।
৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত
দীর্ঘ দেড় বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গাজার সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গাজার বহু হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী শেষ। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সংকটে মৃত্যুর হার প্রতিদিন বাড়ছে।
সাংবাদিক হত্যা: গণমাধ্যমকেই টার্গেট?
নিহত সাংবাদিকের পরিচয় এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে রিপোর্টে জানানো হয়, তিনি স্থানীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন গাজা সিটিতে।
এই ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক উঠেছে, ইসরায়েল কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাংবাদিকদের টার্গেট করছে? আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দাবিও তেমনই।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF) ও আল-জাজিরা সহ একাধিক সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন,
“গাজার পরিস্থিতি এখন মানবিক বিপর্যয়ের বাইরে গিয়ে গণহত্যার কাছাকাছি চলে গেছে।”
ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে-সেখানে নির্বিচারে বোমা ফেলছে, লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বেসামরিক লোকজন, সাংবাদিক, চিকিৎসাকেন্দ্র, এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণ গুদাম পর্যন্ত।