জাহাঙ্গীর চৌধুরী বললেন, সরকার থাকুক জনগণের ইচ্ছা

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করা মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমি পাঁচ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার কথা বলিনি, এটা জনগণ বলেছে।”
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিতর্কিত মন্তব্যের পটভূমি
এর আগে সুনামগঞ্জে এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন,
“সাধারণ মানুষ বলছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। রাস্তাঘাটে মানুষ আমাকে বলছে—আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।”
এই বক্তব্যটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়, কারণ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্বই হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনে সহায়তা করা।
আজকের ব্যাখ্যা: “আমি কিছু বলিনি, এটা জনগণের বক্তব্য”
এই সমালোচনার জবাব দিতে গিয়েই মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,
“আমি কখনো বলিনি সরকারকে আরও পাঁচ বছর রাখতে হবে। আমি জনগণের বক্তব্য তুলে ধরেছি মাত্র। নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কিছু বলার নেই।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“বিচ্ছিন্ন কোনো বক্তব্য টেনে এনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি বরাবরই বলে আসছি—সরকার ও প্রশাসন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে হামলার বিষয়ে মন্তব্য
ব্রিফিংয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রাম ডিসি হিল এলাকায় নববর্ষের অনুষ্ঠানপূর্ব হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান। তিনি বলেন,
“এ ধরনের হামলা অনভিপ্রেত। আমরা এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। দায়ীদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও আশ্বস্ত করেন যে, আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সরকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি
ব্রিফিংয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“নির্বাচন কবে হবে—তা বলার এখতিয়ার আমার নয়। প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে সময় সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমরা সবাই তাঁর দিকনির্দেশনায় কাজ করছি।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আগের মন্তব্যকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের বক্তব্য:
একাধিক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন,
“নিরপেক্ষ সরকারের দায়িত্বে থেকে কাউকে ‘আরও পাঁচ বছর থাকুন’ বলা উচিত নয়। এটি জনগণের অভিমত হলেও তা উপদেষ্টার মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া শালীনতা বহির্ভূত।”
সরকারপন্থি মহলের প্রতিক্রিয়া:
অন্যদিকে সরকারপন্থি বুদ্ধিজীবী ও নেতারা বলছেন,
“উনি তো নিজের মত বলেননি, জনগণের কথা বলেছেন। এতে ভুল কোথায়?”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সেই আগের মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলছেন,
“জনগণের কথা বলা অন্যায় নয়,”
আবার অনেকেই মনে করছেন,
“উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর আরও সংযত থাকা উচিত।”
এই বিতর্কের মধ্যেই আজকের ব্যাখ্যায় তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাইলেও অনেকে তা ‘পাল্টানো বক্তব্য’ বলেও সমালোচনা করছেন।
অতীতেও বিতর্কে ছিলেন উপদেষ্টা
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অতীতেও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
তবে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, তিনি একজন দক্ষ ও বাস্তববাদী উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকা কার্যকর।
সারসংক্ষেপ
- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি কিছু বলিনি, জনগণ বলেছে।”
- নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাইরে কেউ কিছু বলবেন না।
- চট্টগ্রামের ডিসি হিল হামলার ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস।
- আগের মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা।
- সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনআস্থার প্রশ্নে সংবেদনশীল সময় পার করছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিংবা অন্য উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে যেকোনো রাজনৈতিক রঙযুক্ত বা সাধারণীকরণমূলক বক্তব্য সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ভবিষ্যতে সরকারপক্ষের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংযত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণই জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত।