ক্রিকেট

এক বছরে ফারহানের উত্থান, রেকর্ড গড়ার নায়ক

২০২৫ সাল এখনও অর্ধেকও পার হয়নি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই সাহিবজাদা ফারহান এমন এক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন, যা তাকে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত করছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের সঙ্গে। কোহলি, গেইল, গিল কিংবা বাটলার—সবাইকে পেছনে ফেলে ফারহান এখন স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক বছরে সবচেয়ে কম ইনিংসে সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরির মালিক।

পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করা ফারহান এবার পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) মাতাচ্ছেন। গত রাতে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে তিনি এই কীর্তি গড়েন। তার ৫২ বলে ১০৬ রানের ইনিংস শুধু ম্যাচ জেতানো নয়, টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেও এক মাইলফলক।

এক বছরে চার সেঞ্চুরি—ফারহানের সামনে কোহলিরাও ফিকে

সাধারণত, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করাটাই বিরল এক ঘটনা। সেখানে এক বছরে চারটি সেঞ্চুরি—তা-ও মাত্র ৯ ইনিংসে—সত্যিই অভাবনীয়! বিরাট কোহলি ২০১৬ সালে ২৯ ইনিংসে চার সেঞ্চুরি করেছিলেন, ক্রিস গেইলের ছিল ৩১ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি, গিলের ছিল ৩০ ইনিংসে এবং বাটলারের ছিল ৩৮ ইনিংসে। তুলনায় সাহিবজাদা ফারহান করেছেন মাত্র ৯ ইনিংসে! এই পরিসংখ্যান নিজেই বলে দেয়, ফারহানের ফর্ম এখন কতটা ভয়ংকর।

২০২৫ সালে ফারহানের সেঞ্চুরিগুলোর মধ্যে তিনটি এসেছে পাকিস্তানের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ থেকে, এবং সর্বশেষটি পিএসএলে। ফলে এ বছরই সবচেয়ে কম ইনিংসে চার সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড এখন তাঁর দখলে।

পিএসএলে বিধ্বংসী ব্যাটিং, বড় জয়ে ইসলামাবাদ

ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের জার্সিতে ফারহান গত রাতের ম্যাচে পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে খেলেছেন ৫২ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ইনিংসটিতে ছিল ১৩টি চার ও ৫টি বিশাল ছক্কা। তাঁর ঝড়ো ইনিংসে ইসলামাবাদ তুলেছিল ৫ উইকেটে ২৪৩ রান। বিপরীতে, পেশোয়ার থেমে যায় মাত্র ১৪১ রানে। ১০২ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় ইসলামাবাদ, ম্যাচসেরা হন ফারহান।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফারহান বলেন,

“ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি দারুণ ছন্দে ছিলাম। ফখর জামানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, উনি সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি কৃতজ্ঞ যে তাদের ভরসা রাখতে পেরেছি।”

জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার সময়?

অনেকেই মনে করছেন, এখন সময় এসেছে ফারহানকে জাতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার। যদিও তিনি পাকিস্তানের হয়ে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৯৫.৯৯ এবং রান করেছিলেন মাত্র ৮৬। কিন্তু চলতি বছর তাঁর পারফরম্যান্স সেই চিত্র পাল্টে দিতে পারে বলেই ধারণা অনেকের।

যদি তিনি এ ছন্দ অব্যাহত রাখতে পারেন, তবে আসন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজ কিংবা বিশ্বকাপে জাতীয় দলে তাঁর নাম থাকাটা অবাক করার মতো হবে না।

ফারহানের পরিসংখ্যান ও তুলনা

নীচে দেখা যাক টি-টোয়েন্টিতে এক বছরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় ফারহানের অবস্থান কোথায়:

খেলোয়াড়সেঞ্চুরিইনিংসসাল
সাহিবজাদা ফারহান২০২৫
বিরাট কোহলি২৯২০১৬
ক্রিস গেইল৩১২০১১
জস বাটলার৩৮২০২২
শুবমান গিল৩০২০২৩

এই তালিকায় শুধুই সংখ্যার খেলা নয়, এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ফারহানের ব্যাটিংয়ের কার্যকারিতা ও আধিপত্য।

কীভাবে এত উন্নতি?

সাহিবজাদা ফারহানের এই উন্নতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা ও নিজের ব্যাটিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম। ধারাবাহিক রান করা, সুযোগকে কাজে লাগানো এবং নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ—এই তিনই মিলিয়ে তাঁকে করে তুলেছে এমন এক ব্যাটসম্যান, যিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যেকোনো সময়।

সামনে কী?

চলতি পিএসএলে এখনও একাধিক ম্যাচ বাকি। ফারহান কি পারবেন এক বছরে পাঁচ সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটা একেবারেই নিজের করে নিতে? সম্ভবনা অবশ্যই রয়েছে। ফর্ম যেমন বলছে, তাতে করে এরকম আরও চমক অপেক্ষা করছে বলেই মনে হচ্ছে।

এছাড়া জাতীয় দলের দরজাও আরও জোরে কড়া নাড়ছে তাঁর জন্য। পাকিস্তানের ওপেনিং পজিশনে একজন আক্রমণাত্মক, ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন—এখনই হয়তো সময় সাহিবজাদা ফারহানকে সাদা বলের দলে স্থায়ীভাবে যুক্ত করার।

সাহিবজাদা ফারহানের এই উত্থান শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্যও বড় বার্তা। কম ইনিংসে, ধারাবাহিক সেঞ্চুরি করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন—নতুন যুগে নতুন রাজপুত্র এসেছেন। এখন দেখার পালা, এই ফর্ম কোথায় গিয়ে থামে!

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button