চীন ছাড়া সব দেশের জন্য নতুন শুল্ক ৯০ দিন স্থগিতের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের জন্য নতুনভাবে আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মোড়, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নতুন আলোচনার দ্বার উন্মোচন
ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলেন, “বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যসংক্রান্ত আলোচনার জন্য এই বিরতি প্রয়োজন।” এ সময় তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এই সিদ্ধান্ত চীনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। চীনের বিরুদ্ধে তার প্রশাসনের কঠোর অবস্থান বহাল থাকবে।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্পের এই ঘোষণার উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের সঙ্গে নতুন আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও, চীনের প্রতি আগের মতোই কড়া অবস্থান বজায় রেখেছেন।
চীনের ওপর বাড়তি শুল্কের ঘোষণা
চীনের পণ্যের ওপর ইতোমধ্যে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ থেকে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। এটি চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বেশ কিছু বছর ধরেই বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার বড় একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করার মাধ্যমে ট্রাম্প একদিকে চীনা বাজারে চাপ বাড়াতে চাইছেন, অন্যদিকে নিজ দেশের উৎপাদন ও বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে চাচ্ছেন।
অভ্যন্তরীণ চাপে অবস্থান পরিবর্তন
বিভিন্ন কর্পোরেট নেতা ও বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে ট্রাম্পের এই নতুন ঘোষণা এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। জেপি মরগানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন সম্প্রতি মন্তব্য করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, “বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং সরকারকে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে যা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনবে।”
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুল্ক স্থগিত করার ঘোষণা আসা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুসন্ধান করছে, যদিও পুরো পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
শুল্ক হার সাময়িকভাবে হ্রাস
রয়টার্স আরও জানায়, এই ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে আরোপিত শুল্কহার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। যদিও এটি চীনের জন্য প্রযোজ্য নয়, তবুও অন্যান্য দেশগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ ইউরোপ, কানাডা, মেক্সিকো, জাপানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক অংশীদার দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই শুল্ক বিরতি কতটুকু কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে এই সময়কালের মধ্যে আলোচনা কতদূর অগ্রসর হয় তার ওপর।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আলোচনায় প্রস্তুত, তবে এটি হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নমনীয়তা দেখতে পাওয়াটা ইতিবাচক।”
অন্যদিকে চীন এই সিদ্ধান্তে তাদের কোনো ভূমিকা নেই বলেই মন্তব্য করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্তে চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা ন্যায্য নয়। আমরা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় জবাব দিতে প্রস্তুত।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত যদিও সাময়িক স্বস্তি এনে দিতে পারে, তবুও ভবিষ্যতে বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। তাছাড়া, ২০২4 সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অনেকের ধারণা।
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক বিরতির সময়টিকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি সফলভাবে কৌশলগত আলোচনা সম্পন্ন করতে পারে, তবে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। অন্যদিকে, এই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে আবারও শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা বাজারে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
উপসংহার
চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের জন্য নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত একটি পদক্ষেপ। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন দেখার বিষয়, এই ৯০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন কতটা সফলভাবে আলোচনায় অগ্রগতি সাধন করতে পারে এবং তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়।