বানিজ্য

দুবাইয়ে স্বর্ণের দরপতন, প্রতি গ্রামে কমেছে ১.৭৫ দিরহাম

সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বর্ণ বাজারে নতুন এক দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) দুবাই জুয়েলারি গ্রুপের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রামে কমেছে ১.৭৫ দিরহাম। নতুন দামে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রামের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬৩.২৫ দিরহাম, যেখানে একদিন আগেও এটি ছিল ৩৬৫ দিরহাম।

এছাড়া, অন্যান্য ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্যেও পতন লক্ষ্য করা গেছে। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১.৫ দিরহাম কমে বর্তমানে ৩৩৬.৫ দিরহামে বিক্রি হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল ৩৩৮ দিরহাম। অন্যদিকে, ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কমে হয়েছে ৩২২.৫ দিরহাম এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য বর্তমানে ২২৭.৫ দিরহাম।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের অবস্থান

স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারেও দরপতন লক্ষণীয়। স্পট গোল্ড বা আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ০.১৯ মার্কিন ডলার কমে বর্তমানে ৩,০১৫.৬৩ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩,০৫৭ মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই দরপতন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করছে। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বিনিয়োগকারীরা ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সম্পর্কিত ঘোষণার দিকে বিশেষ নজর রাখছেন।

স্বর্ণের দামে পতনের কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, স্বর্ণের দামে সাম্প্রতিক এই পতনের মূল কারণ ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের ভাষণ। এক্সএস.কম-এর সিনিয়র মার্কেট বিশ্লেষক সামের হাসন বলেন, “পাওয়েলের সাম্প্রতিক ভাষণ বিনিয়োগকারীদের আশা অনুযায়ী হয়েছে, যেখানে তিনি শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তীক্ষ্ণ ভাষা পরিহার করেছেন।”

তার মতে, পাওয়েলের ইতিবাচক মনোভাব স্বর্ণের বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে, তবে বিনিয়োগকারীরা এখনো ফেডের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ সম্পর্কিত অনিশ্চয়তাও স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করছে। সামের হাসন আরও বলেন, “ফেড যদি সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা করে, তবে স্বর্ণের বাজার আরও স্থিতিশীল হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হবে।”

আগামী দিনে স্বর্ণের বাজারের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বর্ণের দামে সাময়িক পতন হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে পুনরুদ্ধার হতে পারে। যদি ফেড একাধিক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্বর্ণের বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে।

অন্যান্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ, এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির হারও স্বর্ণের দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে, অনেক বিনিয়োগকারী স্বর্ণকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছেন, যা ভবিষ্যতে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতি ঘটাতে পারে।

স্বর্ণের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ

স্বর্ণের দরপতন অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তারা এখন অপেক্ষা করছেন ফেডের পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য, যা তাদের বিনিয়োগের কৌশল নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদী দরপতন স্বর্ণ কেনার একটি ভালো সুযোগ হতে পারে, বিশেষত যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে বাজারের ওঠানামার প্রতি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।

সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

  • দুবাইয়ে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রামে ১.৭৫ দিরহাম কমে ৩৬৩.২৫ দিরহামে দাঁড়িয়েছে।
  • ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দামেও পতন লক্ষ্য করা গেছে।
  • আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমে প্রতি আউন্স ৩,০১৫.৬৩ মার্কিন ডলারে নেমেছে।
  • ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করছে।
  • বিনিয়োগকারীরা ফেডের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button