মাংস আমদানি বন্ধ, সংকটে তারকা হোটেলগুলো

গরুর মাংস আমদানির সুযোগ না থাকায় দেশের তারকা হোটেলগুলো ব্যবসায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। মাংস আমদানি করতে না পারায় এসব হোটেল ইতিমধ্যে গরুর মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পরিবেশন বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে মদজাতীয় পানীয় আমদানিতে উচ্চ কর ও বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা)-এর এক আলোচনাসভায় এসব বিষয় উঠে আসে। সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সভায় তারকা হোটেলগুলোর বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সংকট সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
গরুর মাংস আমদানি বন্ধের প্রভাব
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার এবং বিহার গরুর মাংস আমদানি কমিটির প্রধান আসিফ আহমেদ বলেন, “গরুর মাংস আমদানি বন্ধ থাকায় আমাদের হোটেলে প্রচলিত মেনুর অনেক খাবার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেবার মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশীয় বাজার থেকে যে মাংস সংগ্রহ করতে হচ্ছে, তার দাম অত্যন্ত চড়া এবং সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন নয়। মাঝে মাঝেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলছে।”
হোটেলগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা
সভা সূত্রে জানা যায়, তারকা হোটেলগুলো বর্তমানে স্থানীয় উৎস থেকে মাংস সংগ্রহ করলেও তা নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত নয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নির্দিষ্ট মানের খাবার পরিবেশন করা জরুরি হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে হোটেলগুলোর সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি রাজস্বও কমছে।
বিহার পক্ষ থেকে গরুর মাংস আমদানির অনুমতি পুনর্বহালের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হোটেলগুলোর নিজস্ব সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
মদজাতীয় পানীয় আমদানিতে উচ্চ করের প্রভাব
হোটেল মালিকদের আরেকটি বড় অভিযোগ হলো মদজাতীয় পানীয় আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান উচ্চ কর ও প্রশাসনিক জটিলতা। বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপল লিফ-এর নির্বাহী পরিচালক নুরুল আলম বলেন, “বর্তমানে মদজাতীয় পানীয় আমদানিতে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। এতে হোটেলগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পর্যটকদের নির্দিষ্ট কিছু পানীয় পরিবেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।”
সভায় এই সমস্যার সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কর কাঠামো সহজ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিহার করণীয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিহার সভাপতি এইচ এম হাকিম আলী সভায় বলেন, “আতিথেয়তা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও একটি উন্নয়নশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ গঠনে বিহা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “যৌথ আলোচনা ও কৌশলগত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থা, নীতিগত স্বচ্ছতা এবং শিল্প পেশাজীবীদের জন্য আরও সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা শুধুমাত্র সেবার উৎকর্ষতাকেই বৃদ্ধি করবে না বরং দেশের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
উপসংহার
বাংলাদেশের তারকা হোটেলগুলো বর্তমানে গরুর মাংস আমদানির অভাবে সংকটে রয়েছে। একই সঙ্গে মদজাতীয় পানীয় আমদানিতে উচ্চ করের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে হোটেল মালিকদের সংগঠন বিহা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আতিথেয়তা খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টাই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।