বিশ্ব

ইসরাইলকে থামাতে ‘কঠোর ও সমন্বিত’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

শীর্ষ এই ইরানি কূটনীতিক শনিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে একটি টেলিফোন আলাপচারিতায় কথা বলেন। এ সময় তিনি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ইসরাইলের আগ্রাসন প্রতিরোধে ‘কঠোর ও সমন্বিত’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। খবর প্রেস টিভির।

আরাগচি গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসন পুনরায় শুরু করার বিষয়টি উল্লেখ করেন, যা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে তেলআবিবের হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

নতুন এই গণহত্যামূলক অভিযানে ১,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এর আগের ১৫ মাসের বর্বর সামরিক অভিযানে প্রায় ৬২,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।

মর্মান্তিক এই বর্বরতার মধ্যে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধমন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ গাজার কিছু অংশ দখল করার হুমকি দিয়েছেন, যদি হামাস ফিলিস্তিনে আটক রাখা জিম্মিদের মুক্তি না দেয়।

 সূত্র: মেহের নিউজ

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য জরুরি

আরাগচি তার বক্তব্যে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস চালানো উচিত এবং এই অন্যায় প্রতিরোধে মুসলিম দেশগুলোর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”

তিনি বিশেষভাবে ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন)-এর সদস্য দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “যদি মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তারা তাদের আগ্রাসন থামাতে বাধ্য হবে।”

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

এ সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানও ইসরাইলি শাসনের প্রাণঘাতী আগ্রাসনের নিন্দা জানান এবং গাজা সংকট উত্তরণ ও চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আমরা ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরতে থাকব।”

তিনি আরও বলেন, “সৌদি আরব বিশ্বাস করে, ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে।”

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভূমিকা

আরাগচি তার বক্তব্যে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চলমান সামরিক আগ্রাসনেরও নিন্দা জানান। যেখানে নিরপরাধ নারী ও শিশুদের মৃত্যু এবং দেশের অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে। তিনি বলেন, “যে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন আমরা প্রত্যাখ্যান করি, এবং এ ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের একত্রিত হওয়া প্রয়োজন।”

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের আনসারাল্লাহ সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ‘ধ্বংস’ করার অঙ্গীকার করেছেন। যারা গাজার পক্ষে সানার সহায়ক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাজ করছে।

ইসরাইলকে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের ওপর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তাদের আগ্রাসন কমাতে বাধ্য হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “যে দেশগুলো ইসরাইলকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, তাদের প্রতিও কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা উচিত।”

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করি মুসলিম দেশগুলো একটি যৌথ পদক্ষেপ নেবে এবং বিশ্বজনমতকে ফিলিস্তিনের পক্ষে আরও বেশি সক্রিয় করবে।”

উপসংহার

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, বিশ্ব সম্প্রদায়ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button