আদালত যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বলেছেন, তাঁর প্রশাসনের কাজে বাধা না দিতে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি আদালতের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। আদালতের সঙ্গে বিরোধের মূল কারণ ছিল ভেনেজুয়েলার কয়েক শ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে এল সালভাদরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত। ট্রাম্পের এ মন্তব্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বহিষ্কার
ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ কড়া ভাষায় ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক শ ভেনেজুয়েলান নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করেছে। বিচারক বোসবার্গ ট্রাম্প প্রশাসনকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মিত যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে ট্রেন ডি আরাগুয়ার গ্যাংয়ের ২৩৮ এবং আন্তর্জাতিক গ্যাং গোষ্ঠী এমএস-১৩-এর ২৩ সদস্য রয়েছেন।
বিতর্কিত যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ
এই বহিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক শতাব্দী পুরোনো যুদ্ধকালীন আইন—ভিনদেশি শত্রু আইন (এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট)—ব্যবহার করে। এটি সাধারণত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা হয়। বিচারক বোসবার্গ এ আইনের প্রয়োগ দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলেও ট্রাম্প প্রশাসন তা উপেক্ষা করে বহিষ্কার কার্যক্রম চালায়।
আদালতের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন
বিচারক বোসবার্গ জানতে চান, ট্রাম্পের ঘোষণাটি কার্যকর হওয়ার সঠিক সময় এবং বহিষ্কারের ফ্লাইটগুলো কখন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্দেশ হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পরপরই শনিবার বিকেলে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের বহনকারী তিনটি উড়োজাহাজ এল সালভাদরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তবে বোসবার্গের আদেশ আসার পরও অন্তত একটি ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যায়।
আইসিই কর্মকর্তা রবার্ট সারনা আদালতে বলেন, বহিষ্কৃতদের শুধু এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্টের ভিত্তিতে পাঠানো হয়নি; বরং তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পৃথক বহিষ্কার আদেশ ছিল। এ ছাড়া আদালতের লিখিত আদেশ আসার আগেই ফ্লাইটগুলো যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছিল বলে দাবি করেছে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা।
বিচারকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান
মঙ্গলবার সকালে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বিচারক বোসবার্গের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (বোসবার্গ) একজন বিঘ্ন ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি।’ যদিও তিনি সরাসরি বিচারকের নাম উল্লেখ করেননি, তবে তার বক্তব্যে আদালতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সতর্ক করে বলেন, আদালতের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিলে অভিশংসন কোনো সমাধান নয়। প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্য দেশটির ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আইনি বিতর্ক ও সাংবিধানিক সংকটের শঙ্কা
বিচারক বোসবার্গ বৃহস্পতিবার নতুন করে আদেশ দিয়েছেন এবং আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে বহিষ্কারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। তিনি আইসিইর দেওয়া ব্যাখ্যাকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘সরকার আবারও নিজেদের বাধ্যবাধকতা এড়ানোর চেষ্টা করছে।’
এ প্রসঙ্গে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে বহিষ্কার কার্যক্রম চালানো এবং ট্রাম্পের আদালতবিরোধী মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে সাংবিধানিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংকটের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাব্য পরিণতি
বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত দেখা দিতে পারে। আদালতের নির্দেশ মানার বিষয়ে প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদি ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের আদেশ উপেক্ষা করতে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।