বিশ্ব

মমতার দাবি: সুনিতা উইলিয়ামসকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক

বৃহস্পতিবার, ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান, ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ দাবি জানান, নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামসের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দীর্ঘ ৯ মাসের অভিযানের সফল সমাপ্তি উপলক্ষে। মমতার মতে, সুনিতার এই সাহসিকতা ও মানবজাতির জন্য অবদান ভারতবাসীর জন্য গর্বের বিষয়, এবং তাই তাকে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা উচিত।

মহাকাশ থেকে ফিরে আসলেন সুনিতা উইলিয়ামস

বুধবার রাতের দিকে, সুনিতা উইলিয়ামসসহ চারটি নভোচারীর একটি দল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসে। তাদের মধ্যে অন্যান্য নভোচারীরা হলেন, বুচ উইলমোর, নিক হেগ, এবং আলেকসান্দর গরবুনোভ। বাংলাদেশ সময় ৩টা ৫৭ মিনিটে ফ্লোরিডার উপকূলের সমুদ্রে তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি অবতরণ করে। সেখানে আগেই উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত ছিল তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে।

সুনিতার ফিরতে এবং জীবিত অবস্থায় ফিরে আসায় আনন্দিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি আমাদের সবার জন্য গর্বের মুহূর্ত। মহাকাশে সুনিতার সাহসিকতা ও মানবজাতির প্রতি তার অবদান আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। সুনিতাকে ভারতরত্ন প্রদান করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “যে উদ্ধারকারী দল সুনিতাদের ফিরিয়ে এনেছে তাদেরও অভিনন্দন জানাই।”

সুনিতা উইলিয়ামসের দীর্ঘ মহাকাশ অভিযান

সুনিতা উইলিয়ামসের মহাকাশে যাওয়ার যাত্রা ছিল এক ইতিহাসের অংশ। তিনি ২০০৬ সালে নাসা মিশনের মাধ্যমে মহাকাশে পা রাখেন। তবে তার বর্তমান মিশনটি ছিল একেবারে বিশেষ। প্রায় ৯ মাস ধরে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করেন এবং এই সময়কালে তিনি তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজগুলো সম্পন্ন করেন। তার এই দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণ শুধুমাত্র বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, একজন ভারতীয় হিসেবে তার এক অনন্য কীর্তি।

সুনিতার মহাকাশে অবস্থান ও তার সফল মিশন শুধু সবার কাছে বিশেষ কিছু নয়, বরং এটি একটি গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মহাকাশচারী হিসেবে তার এই মিশন শুধু ভারতের জন্য, বরং বিশ্বের জন্যও একটি সাফল্যের প্রতীক।

মমতার দাবি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুনিতার এই সাফল্যে বাংলাদেশ-ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এক গভীর বার্তা পাঠিয়েছেন। তার ভাষ্য, “আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি আমাদের জন্য শুধুমাত্র সৌভাগ্য নয়, এটি আমাদের জাতীয় অহংকারের বিষয়। সুনিতার মহাকাশ অভিযানে প্রত্যাবর্তন ভারতীয় বৈজ্ঞানিক ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাই, তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান, ভারতরত্ন দেওয়া উচিত।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “তিনিই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা, যিনি মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করেছেন। তার এই কীর্তি আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের গর্ব।” মমতার এই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া হয়। তিনি তার দাবির পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরে, সুনিতার মহাকাশ অভিযানের গুরুত্ব ও তার পৃথিবী ফিরে আসাকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন।

সুনিতার জন্ম ও তার অভিজ্ঞতা

সুনিতা উইলিয়ামসের জন্ম ১৯৬৫ সালে ভারতের গুজরাটের মেহসানা জেলার ঝুলাসন গ্রামে। তার বাবা দীপক পান্ড্য ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। তার মা, মহাশ্বেতা পান্ড্য, ছিলেন একজন সমাজকর্মী। ২০২০ সালে তার বাবা প্রয়াত হন, তবে সুনিতা তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন সবসময়।

সুনিতা উইলিয়ামসের মহাকাশ অভিযানে তার দেশ ও পরিবারের গর্বের বিষয়টি স্পষ্ট। তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, সুনিতার মহাকাশ অভিযানের সফল সমাপ্তি তারা অত্যন্ত আনন্দিত, এবং শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন। তার গ্রামেও আনন্দের বাতাস বইছে। তারা সুনিতার মিশনের সফলতাকে উৎসবের মতো উদযাপন করছেন।

ভারতরত্ন: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান

ভারতরত্ন হল ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় সম্মান, যা শুধু ভারতীয় নাগরিকদেরই দেওয়া হয়। এটি এমন এক সম্মান, যা যে কোনো নাগরিকের জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্ত হতে পারে। এই পুরস্কারটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ থাকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি যে, সুনিতা উইলিয়ামসকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক, তা একটি শক্তিশালী পীযূষের মতো। এতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা তথা সুনিতার মহাকাশ অভিযানে তার সাহসিকতার প্রতি রাষ্ট্রের শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হবে। মমতার মন্তব্য দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে এক অঙ্গীকার জানানো, যেন তারা সুনিতার মতো আত্মবিশ্বাসী, সাহসী এবং পেশাদারদের সন্মান দেয়।

ভবিষ্যত: মহাকাশ গবেষণা ও ভারত

ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও সুনিতার সফলতা একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-এর অবদান এবং সহযোগিতা মহাকাশ গবেষণার আকাশে নতুন নজির স্থাপন করেছে। সুনিতার মতো মহাকাশচারীরা, বিশেষ করে মহিলা মহাকাশচারীরা, ভারতীয় গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করছেন।

সুনিতার অভিযানের পর, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় আরও আগ্রহ তৈরি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভারতীয় মহাকাশে মহিলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক মহিলাকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

উপসংহার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনিতা উইলিয়ামসকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রীয় সম্মান দাবি নয়, এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলককে চিহ্নিত করে। সুনিতা উইলিয়ামসের মহাকাশ অভিযানের সফলতা আমাদের দেশের মহাকাশ গবেষণার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এবং এটি এক শাশ্বত প্রেরণা হিসেবে থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button