প্রবাসী আয়ের নামে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যক্তি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, প্রবাসী আয়ের নামে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যক্তি। করমুক্ত সুবিধা ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে এই বিপুল অর্থ দেশে আনার বিষয়টি কর কর্মকর্তাদের সন্দেহ তৈরি করেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিসিএস কর ক্যাডারদের এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে ওই ব্যক্তির নাম, পরিচয় ও ঘটনার সময় উল্লেখ করেননি তিনি।
সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য
প্রবাসী আয়ের নামে এক ব্যক্তির এত বিপুল অর্থ দেশে আসার বিষয়ে কর কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘নাম না বলাই ভালো। ব্যবস্থা তো নিতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়ার পরে এমনিতেই আপনারা নাম জেনে যাবেন।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিদুল হাসান।
বর্তমানে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে করমুক্তি সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দিচ্ছে। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এক ব্যবসায়ী এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
কর ফাঁকির আশঙ্কা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য
দেশে প্রত্যক্ষ কর বাড়লেও অর্থনৈতিক বৈষম্য না কমে বাড়ছে কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেসব প্রবাসী কঠোর পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠান, তাঁদের সেই আয় করমুক্ত হবে। এ জন্য আইন করা হয়েছে প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে। কিন্তু আইনকানুনের ব্যত্যয় করে সেই সুবিধার আড়ালে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনলে আশ্চর্য হবেন, এমন করদাতা পাওয়া গেল, যিনি ৭৩০ কোটি টাকা নিয়ে এলেন। তিনি বলছেন, এটি ওয়েজ আর্নার্স ইনকাম এবং তা করমুক্ত। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।’
কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘হয় আমরা এগুলো দেখিনি, অথবা বুঝিনি। অথবা দেখেও না দেখার ভান করছি। এভাবে আমরা তাঁদের সুযোগ দিচ্ছি। এগুলোই আমাদের বড় সমস্যা।’
অনলাইন আয়কর রিটার্ন বা ই-রিটার্ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন থাকলেও সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৩ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)ধারী রয়েছেন, কিন্তু রিটার্ন দেন মাত্র ৪০ লাখ করদাতা। বাকি ৮০ লাখের বেশি মানুষ রিটার্ন দেন না।
ভবিষ্যতে ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সংযুক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। এতে করদাতার আমানত, উৎসে কর কর্তনের তথ্যসহ অন্যান্য মৌলিক তথ্য রিটার্ন জমার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে।
সাংবাদিকদের পরামর্শ ও কর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন
সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা করদাতাদের ভয়ভীতি দূর করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং আমদানি-রপ্তানিসহ করসংক্রান্ত সব হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত অনলাইনে প্রকাশের আহ্বান জানান।