বানিজ্য

চীনের অর্থনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: সি চিন পিংয়ের ব্যবসায় নীতি পরিবর্তন

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছেন। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈঠকগুলি এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করা এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় চীনের অবস্থান সুদৃঢ় করা।

জ্যাক মার পুনরাবির্ভাব: প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্ত

২০২০ সালের পর থেকে জনসমক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। চীনা সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি আড়ালে চলে যান। তবে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। অনুষ্ঠানে সি চিন পিং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেখানে জ্যাক মা সামনের সারিতে বসেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর করমর্দনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে আলিবাবার শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ বেড়ে যায়।

চীনের অর্থনৈতিক নীতি: নতুন দৃষ্টিকোণ

গত কয়েক বছরে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্কবাধা এর পেছনে প্রধান কারণ। সি চিন পিং সরকারের বড় কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের নীতিও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। তবে, বর্তমান বাস্তবতায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন করেছেন। তিনি উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি ও নতুন উৎপাদক শক্তির বিকাশে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বেসরকারি খাতের গুরুত্ব: জাতীয় স্বার্থে সমন্বয়

চীনের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়ন অর্জন করা। এর জন্য বেসরকারি খাতের ভূমিকা অপরিহার্য। সি চিন পিং বেসরকারি খাতকে জাতীয় নীতি ও কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “উদ্ভাবন করুন। নিজেদের প্রতিভার স্ফুরণ দেখানোর এটাই সেরা সময়।” বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নীতিগত পরিবর্তন প্রযুক্তি খাতের নিয়ন্ত্রণের বদলে তাদের নিয়ন্ত্রিতভাবে কাজে লাগানোর কৌশল নির্দেশ করে।

ডিপসিক: চীনের প্রযুক্তিগত সাফল্য

চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্ম ডিপসিক মুক্তির পর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ২৬ লাখ ডাউনলোড হয়। এটি চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রতিফলন। ডিপসিকের সাফল্য চীনের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। হংকং ও চীনের মূল ভূখণ্ডের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।

বাণিজ্যযুদ্ধ ও চীনের কৌশলগত পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপের জবাবে চীনও পাল্টা শুল্কারোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে সি চিন পিং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বেসরকারি খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের উদ্বেগ ও পরামর্শ শুনছেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক নীতিতে নতুন দৃষ্টিকোণ যুক্ত করেছে। বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন, উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জাতীয় স্বার্থে সমন্বিত উদ্যোগ চীনের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পদক্ষেপগুলি চীনকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button