টিসিবির সাত হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়নি, পণ্য দেওয়া হচ্ছে ‘নেতাদের স্লিপে’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রায় সাত হাজার স্মার্ট কার্ড দুই মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে। এই কার্ড ইস্যু হওয়ার পরও বিতরণ না করায় ভোক্তারা টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের সুপারিশের কারণে এসব কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিস্তারিত
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল বশর জানান, তিনি টিসিবির পণ্য কিনতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কার্ড না থাকায় পণ্য পাননি। অথচ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের স্লিপ নিয়ে যাঁরা গেছেন, তাঁদের পণ্য দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনেছেন, তাঁর নামে স্মার্ট কার্ড ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) রয়েছে, কিন্তু ইউপি কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে যে তাঁর কার্ড এখনো হয়নি।
অন্য এক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি পুরোনো কার্ড নিয়ে পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাননি।
টিসিবির কার্যক্রম
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সচিব শোভন ভৌমিক জানান, মোট ১ হাজার ৬৫ জনের স্মার্ট কার্ড এসেছে, এর মধ্যে ৫২৯টি বিতরণ করা হয়েছে। যাঁরা স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন, তাঁদের কাছে পণ্য বিক্রি করার পরও কিছু পণ্য রয়ে যায়, যা ফেরত না পাঠিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে হতদরিদ্র মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়।
প্রশাসনের বক্তব্য
উপজেলা প্রশাসন জানায়, স্মার্ট কার্ডধারীদের সচ্ছলতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গত ২৯ জানুয়ারি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের জন্য ১০ হাজার ৪৭২টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়, এর মধ্যে ৩ হাজার ৫৫০টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক চাপ
জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মিজানুর রহমান বলেন, টিসিবির উপকারভোগীদের বিষয়ে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আসা স্মার্ট কার্ডের ৩০ শতাংশ বিতরণ করা হবে এবং বাকি ৭০ শতাংশের জন্য নতুন তালিকা করা হবে।
ইউএনওর মন্তব্য
ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, টিসিবির লোকজন প্রতিটি ইউনিয়নে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে যান। স্মার্ট কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করার পর অবশিষ্ট পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, যোগ্য লোকদের কার্ড বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে।
এই পরিস্থিতি ভোক্তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে টিসিবির পণ্য বিতরণে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা তাদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন।