বাংলাদেশ

বোমা মেরে গুলি করে সোনার দোকানে ডাকাতিতে ৮ চক্রের সন্ধান

রাজধানীর বনশ্রীতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই ঘটনায় জড়িত আটটি ডাকাত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। এই চক্রগুলো বোমা মেরে এবং গুলি করে সোনার দোকানে ডাকাতি করে থাকে।

ডাকাতির ঘটনা ও তদন্ত

বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে ডিবি এসব চক্রের সন্ধান পেয়েছে। শুধু বনশ্রীর সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি করে ডাকাতি নয়, ৯ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ঢাকার ডেমরা ও কেরানীগঞ্জে বোমা ককটেল ফাটিয়ে দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায়ও এসব চক্রের সদস্যরা জড়িত।

ডাকাতির পদ্ধতি

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। সোনার দোকানে ডাকাতির সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করে। কখনো দোকানের মালিক ও কর্মচারীকে গুলি করে আবার কখনো বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে ডাকাতি করে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত একাধিক চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। বনশ্রীর ঘটনার পর এসব চক্রের সদস্যরা আরও একাধিক সোনার দোকানে ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ডাকাতির চক্রের সদস্যদের পরিচয়

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বোমা মেরে সোনার দোকানে ডাকাতিতে সারা দেশে অর্ধশতাধিক চক্রের তিন শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের বাড়ি বরিশাল। এ ছাড়া কুমিল্লা, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলের কিছু লোকও এই চক্রে রয়েছে।

ডাকাতির সোনা কেনেন দুলাল নামের এক ব্যক্তি, যিনি ডাকাতির চক্রগুলোর কাছ থেকে সোনা কিনে বিক্রি করেন। তদন্তে দুলাল চৌধুরী নামের এই ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তিনি ডাকাতির সোনা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কিনে বিক্রি করেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন মো. কাউছার (৩১), মো. ফরহাদ (৬৪), মো. খলিলুর রহমান (৫০), মো. সুমন (৩০), দুলাল চৌধুরী (৪৩) ও মো. আমিনুল (৩৫)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মো. কাউসার বনশ্রীতে ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্বে ছিলেন।

ডাকাতির পেছনের ইতিহাস

ইয়াসিন মাল নামের ডাকাতির চক্রের প্রধান ইয়াসিন মালের বড় ভাই ইয়াকুব মাল ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। কয়েক বছর আগে ইয়াকুব বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এরপর ইয়াসিন মাল এই চক্রের প্রধান হয়ে যান। ইয়াসিন মালের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির মতো মামলা রয়েছে।

ঢাকায় সোনার দোকানে ডাকাতির এই ঘটনা এবং এর পেছনের চক্রগুলো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছে। তবে, ডাকাতির পদ্ধতি ও সদস্যদের কার্যক্রমের কারণে এই সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button