অর্থনীতি

৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট তাদের শেয়ারধারীদের জন্য গত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি সর্বমোট ৪৪১ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকি ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমের পর বিতরণ করা হবে।

কোম্পানিটি ২০২৩ সালের জন্য মোট ৩৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই লভ্যাংশের মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ, যা ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৯ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে গণ্য হবে, যা এজিএমের পর শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা থেকে এই চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানানো হয়েছে।

লভ্যাংশের পাশাপাশি, লাফার্জহোলসিম তাদের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যও প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানির মুনাফা ২১২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ কমেছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালে লাফার্জহোলসিম তাদের শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে মোট ৫৮১ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল। ওই বছর কোম্পানিটি অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত মিলিয়ে মোট ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কিন্তু গত বছর লভ্যাংশের হার কমে ৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ ১৪০ কোটি টাকা কমেছে।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মুনাফা কমে যাওয়াই লভ্যাংশ কমার মূল কারণ। আর মুনাফা কমার প্রধান কারণ হলো কোম্পানির বিক্রি হ্রাস পাওয়া। গত বছর কোম্পানিটি ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে, যেখানে আগের বছর বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে লাফার্জহোলসিমের বিক্রি ৮৫ কোটি টাকা বা ৩ শতাংশ কমেছে।

কোম্পানিটি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছে। কোম্পানির মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি। এর প্রধান কারণ হলো সিমেন্টের পাশাপাশি চুনাপাথরসহ অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভালো আয়। কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত বছর তাদের চুনাপাথরের ব্যবসায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই কারণে বছর শেষে সার্বিকভাবে ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো ধাক্কা লাগেনি।

এদিকে, গত বছরের জন্য অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে কোম্পানিটি ৪৪১ কোটি টাকার যে লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার একটি বড় অংশ পাবেন কোম্পানির দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তারা। কারণ, কোম্পানির শেয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের হাতে রয়েছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে কোম্পানির দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের হাতে ছিল ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে, ঘোষিত মোট লভ্যাংশের মধ্যে ২৮৩ কোটি টাকা পাবেন এসব উদ্যোক্তা, যার অর্ধেক তারা ইতোমধ্যে পেয়েও গেছেন। বাকি লভ্যাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৭ কোটি টাকা, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৬৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৩ কোটি টাকা। এই লভ্যাংশের অর্ধেক অর্থ শেয়ারধারীরা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন।

গত বছর শেষে লভ্যাংশ ও মুনাফা উভয়ই কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে লাফার্জহোলসিমের শেয়ারের দামেও পতন দেখা গেছে। ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১ শতাংশ বা ৫০ পয়সা কমে সাড়ে ৪৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দিন শেষে কোম্পানিটির প্রায় দুই কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়েছে।

কোম্পানির এই আর্থিক প্রতিবেদন এবং লভ্যাংশ ঘোষণার ফলে শেয়ারবাজারে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, মুনাফা কমে যাওয়ায় এবং লভ্যাংশের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, কোম্পানির অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভালো আয় এবং সামগ্রিক ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।

লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে।

কোম্পানির এই উদ্যোগগুলো আগামী দিনে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং আর্থিক ফলাফল উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভার দিকে তাকিয়ে আছেন, যেখানে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button