ট্রাম্পের নজরে পড়া গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থীদের বড় জয়

গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে মধ্য–ডানপন্থী বিরোধীরা আশ্চর্যজনক জয় পেতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত অঞ্চলটিতে স্বাধীনতার পক্ষে থাকা জাতীয়তাবাদী নালেরাক পার্টির সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএনআর এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে নিজেদের ‘সোশ্যাল লিবারেল’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া ডেমোক্রেটিক পার্টি অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। দলটি গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে, তবে পর্যাপ্ত সময় নেওয়ার পক্ষে।
নির্বাচনের ফলাফল
স্বাধীনতাপন্থী দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নালেরাক পার্টি এরই মধ্যে একটি ‘অত্যাশ্চর্য’ নির্বাচনী সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছে। মোট ৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭১টির গণনা শেষে দেখা গেছে, নালেরাক পার্টি ২৪.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দলটির ভোট দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর ২৯.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। ক্ষমতাসীন আইএ পার্টি ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে।
ট্রাম্পের আগ্রহ
অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট বাইরের বিশ্বের খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। কিন্তু এবার ভিন্ন আবহ রয়েছে। ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণের আগ্রহের কারণে এবারের ভোট বাইরের বিশ্বের নজর কেড়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বাম–গ্রিন আইএ পার্টির নেতা মুট এগেদে বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ ক্ষমতাসীনদের জোটসঙ্গী সিউমুত পার্টির নেতাও নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি
গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের জনসংখ্যা ৬০ হাজারের কিছুটা কম। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ৪৪ হাজার। স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ৩১ আসনের পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর নির্বাচন হয়। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৬ আসন পেতে হয়।
এবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। তাই আগামী দিনগুলোয় জোট সরকার গঠনের জন্য এগিয়ে থাকা দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। পরবর্তী সরকার গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটরা সব দলের সঙ্গে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রেখেছে এবং ঐক্য চাইছে, বিশেষ করে বিশ্বে এখন যা ঘটছে তা নিয়ে, বলেন দলটির ৩৩ বছর বয়সী নেতা জেনস-ফ্রেডেরিক নিয়েলসেন।
স্বাধীনতার পক্ষে জনমত
দ্বীপের বাসিন্দারা, যাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশই ইনুইট—বলেছেন, তাঁরা তাঁদের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ডেনমার্কের দ্বারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ পেতে পেতে ক্লান্ত। তাঁদের অভিযোগ, ঐতিহাসিকভাবে তাঁদের সংস্কৃতিকে দমন করা হয়েছে।
এসব কারণে গ্রিনল্যান্ডের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান। তবে স্বাধীনতার সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য
কৌশলগত অবস্থানের পাশাপাশি অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের কারণে দ্বীপটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর পড়েছে। তিনি তাঁর ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি প্রথম সামনে এনেছিলেন।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নেন। ক্ষমতায় বসার পর থেকে তিনি দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা বারবার বলে আসছেন। তবে ট্রাম্পের এই আগ্রহের বিষয়টি গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের নেতারা বারবার নাকচ করেছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ট্রাম্প। ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড আমাদের দরকার।