সার্কভুক্ত দেশের বাণিজ্য: বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী অন্যান্য আঞ্চলিক জোটগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। রাজনৈতিক জটিলতা, নীতিগত পার্থক্য এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ এক অর্থবছরে যত পণ্য রপ্তানি করে, তার মাত্র ৪.৪৭ শতাংশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যায়।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হলো ভারত। বাংলাদেশের সার্কভুক্ত দেশগুলোতে মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই ভারতে হয়। অন্যদিকে, সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৯২.১৯ শতাংশই আসে ভারত থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে প্রায় ১৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এরপর পাকিস্তানে ৬ কোটি ২১ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার, নেপালে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, আফগানিস্তানে ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার, ভুটানে প্রায় ৯১ লাখ ডলার এবং মালদ্বীপে প্রায় ৪১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
রপ্তানি পণ্যের ধরন
বাংলাদেশ থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি করা প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে:
- ভারত: বস্ত্র, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ তেল, কাঁচা চামড়া, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, খনিজ, যন্ত্রাংশ।
- পাকিস্তান: বস্ত্র, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, রাবার, মৌল ধাতু, জুতা।
- শ্রীলঙ্কা: রাসায়নিক ও শিল্পপণ্য, মণ্ড, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ।
- নেপাল: প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, রাসায়নিক ও সহায়ক শিল্পপণ্য, প্লাস্টিক, রাবার, খনিজ ও অন্যান্য পণ্য।
- ভুটান: প্রস্তুতকৃত খাদ্য, ভিনেগার, তামাক, খনিজ, প্লাস্টিক।
- মালদ্বীপ: প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, স্পিরিট, সবজি, বস্ত্র ও সহায়ক পণ্য।
আমদানি পরিস্থিতি
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এ ছাড়া ভুটান থেকে প্রায় ৪ কোটি ডলার, আফগানিস্তান থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার, পাকিস্তান থেকে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার, নেপাল থেকে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি ও ভারসাম্য
সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪,৬৯৭.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বাংলাদেশের সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি নির্দেশ করে।
প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। ফলে, সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের ১ শতাংশেরও কম আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ২,৩৯১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যার মধ্যে ৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে। এর মধ্যে মালদ্বীপ থেকে এসেছে প্রায় ৬৯ শতাংশ এবং ভারত থেকে প্রায় ২৩ শতাংশ।