বিশ্ব

জুমার নামাজ ও দোল এক দিনে পড়ায় শঙ্কা, সতকর্তা

দোলযাত্রার দিন ভারতজুড়ে শান্তি বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিটি রাজ্য সরকারকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। এবারের দোলযাত্রা পড়েছে পবিত্র রমজান মাসে, এবং বিশেষত জুমার দিনে, যা বিশেষ সংবেদনশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ কারণে সম্ভাব্য উত্তেজনা এড়াতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উৎসব নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিটি রাজ্য প্রশাসনকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জুমার দিনে হোলির মতো একটি রঙের উৎসব উদযাপনের ফলে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন বা ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা রয়েছে। সেই শঙ্কা থেকে রাজ্যগুলোকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে।

উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান ও দিল্লির মতো সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের সম্ভল শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ যদি রঙ খেলা নিয়ে সংবেদনশীল হন, তাহলে তাদের নিজ বাড়িতে অবস্থান করাই উত্তম হবে।

জুমার সময় পরিবর্তন ও মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান

উত্তেজনা এড়াতে লক্ষ্ণৌসহ বিভিন্ন শহরের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা জুমার নামাজের সময় পরিবর্তন করেছেন। সাধারণত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে জুমার নামাজ আদায় করা হলেও, এবার তা বেলা ২টা থেকে আড়াইটায় পিছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লক্ষ্ণৌ ঈদগাহের ইমাম মুসলমানদের অনুরোধ করেছেন, তারা যেন স্থানীয় মসজিদেই নামাজ আদায় করেন এবং দূরের মসজিদে না যান। একইভাবে বেরিলির মুফতি মিশ্র এলাকায় বসবাসকারী মুসলমানদের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়িতেই অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্ভল মসজিদের ইমামও ঘোষণা করেছেন যে, জুমার নামাজ বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, হোলির রঙ খেলার কার্যক্রম বেলা ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যেই শেষ করে ফেলা হবে। সম্ভল জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত সাত কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিহারে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রতিক্রিয়া

বিজেপি শাসিত বিহারে এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মধুবনি জেলার বিজেপি বিধায়ক হরিভূষণ ঠাকুর সম্প্রতি বলেছেন, “হোলির দিন মুসলমানদের ঘরে থাকা উচিত, যাতে হিন্দুরা তাদের উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারেন।”

বিজেপি নেতার এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দল আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপি ও আরএসএস সব সময় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন হরিভূষণ ঠাকুরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তেজস্বী যাদব আরও বলেন, “বিহার এমন এক রাজ্য, যেখানে দাঙ্গা ছড়ানোর প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এখানে মুসলমানদের সুরক্ষা দিতে পাঁচ-ছয়জন হিন্দু সব সময় প্রস্তুত থাকেন।”

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান

এদিকে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ উভয় সম্প্রদায়ের প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, ভারত বহুত্ববাদী সংস্কৃতির দেশ এবং এখানে প্রতিটি ধর্মের অনুসারীদের উচিত পরস্পরের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।

উপসংহার

হোলি ও জুমার নামাজ একই দিনে পড়ায় প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শান্তি বজায় রেখে উভয় সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button