বানিজ্য

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় চমক, প্রবৃদ্ধি ৪৬%

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসেছে এক বড় চমক। জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলার, যা গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এ উন্নতি বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সবচেয়ে বড় একটি খাত। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি করা পোশাকের পরিমাণ ছিল ৬০৩ কোটি ডলার, যা ১৯ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৭২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য এই প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না, বরং বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশি পোশাকের ঘুরে দাঁড়ানো

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি গত বছর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। বিশেষত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তবে ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি কম হলেও ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। গত বছরে বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

একই সময়ে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল। তবে, ২০২৪ সালে পুনরায় প্রবৃদ্ধির এই ধারাটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য আশাব্যঞ্জক বার্তা বয়ে আনছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর কানাডা, মেক্সিকো এবং চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন সুযোগ দেখতে পেয়েছেন। চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে ক্রয়াদেশ কমিয়ে বাংলাদেশের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা চীন থেকে আসা অতিরিক্ত শুল্কের কারণে বাড়তি ক্রয়াদেশ পাওয়ার আশা করছেন। এমনকি চীন থেকে কারখানা সরিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এই বৃদ্ধির সুযোগ গ্রহণ করা জরুরি।

বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর তুলনা

অটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চীন ১৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৭২ শতাংশ বেশি। ভিয়েতনাম, আরেকটি বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, জানুয়ারিতে ১৪৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯.৯০ শতাংশ বেশি।

এই প্রবৃদ্ধির সাথে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হচ্ছে, তবে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হতে পারে। তাই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে বিশ্ব বাজারে আরও শক্তিশালী করতে বেগবান হতে হবে।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই প্রবৃদ্ধি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারে এমন প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে। দেশের উদ্যোক্তারা যদি বর্তমান পরিস্থিতি ব্যবহার করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নতি দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যদি বর্তমান প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা যায় এবং আরও নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়, তবে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button