বিশ্ব

ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত: ইউএসএআইডির ৮৩% কর্মসূচি বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) তাদের ৮৩ শতাংশ কর্মসূচি বাতিল করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন, যা আন্তর্জাতিক সহায়তা নীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সিদ্ধান্ত

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই তিনি ইউএসএআইডির ওপর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক নীতিনির্ধারক সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এর ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

মার্কো রুবিও এক্স পোস্টে বলেন, “ছয় সপ্তাহের গভীর পর্যালোচনা শেষে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএসএআইডির ৮৩ শতাংশ কর্মসূচি বাতিল করছি। এই সিদ্ধান্তের ফলে ৫,২০০-এর বেশি চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে, যা কয়েক দশক ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের আওতাভুক্ত ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এই ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ছিল বা সরাসরি ক্ষতির কারণ হয়েছিল।”

ইলন মাস্কের ভূমিকা

ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএসএআইডি পুনর্গঠনের এই পরিকল্পনায় টেক জায়ান্ট ইলন মাস্ক সরাসরি জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, মাস্ক এই সংস্থার কার্যক্রম কমিয়ে এনে প্রযুক্তিনির্ভর নতুন মডেল তৈরির পরিকল্পনা করছেন। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাস্ক ও তার টিম উন্নয়ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।

ইউএসএআইডির ঐতিহাসিক ভূমিকা

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, মানবিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ইউএসএআইডিতে প্রায় ১০,০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশি সহায়তার পরিমাণ বছরে প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ইউএসএআইডির জন্য বরাদ্দ থাকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

কোন কর্মসূচিগুলো বাতিল হচ্ছে?

ইউএসএআইডির বাজেট সংকোচনের ফলে নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলো বাতিল হতে পারে:

  • উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি
  • কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগ
  • জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ প্রকল্প
  • শিক্ষা ও গবেষণা সহায়তা
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কর্মসূচিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ঘোষণার ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ ইউএসএআইডির সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। এটি এক ধরনের স্বার্থপরতা, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানকেও দুর্বল করবে।”

ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাবকে দুর্বল করতে পারে। ইউএসএআইডির কর্মসূচি বন্ধ হলে উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে পারে, যা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএসএআইডির ৮৩ শতাংশ কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন প্রকল্প ও মানবিক সহায়তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এটি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার জন্য নেওয়া একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button