গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কাতার যাচ্ছেন উইটকফ

গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান ও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে কাতার যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওসের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার (৯ মার্চ) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা জোরদার করতে ইসরায়েলও একটি প্রতিনিধি দল দোহায় পাঠাচ্ছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সোমবার (১০ মার্চ) কাতারের রাজধানীতে এই আলোচনায় অংশ নেবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একসঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময়সীমা রমজান পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে চাপ দেবে।
তবে হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি চাইছে, পূর্বনির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করতে। তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতির জন্য তারা যে শর্ত আগেই দিয়েছিল, তা মেনে নেওয়া ছাড়া নতুন করে কোনো আলোচনা এগোবে না।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান সংঘাত নিরসনে কাতারে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টিভ উইটকফের এই সফর কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কাতার ইতোমধ্যেই গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা চাই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করা হোক। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা গেলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কাতারে আলোচনার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিচ্ছি, তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো হামাসকে দুর্বল করা। আমরা কোনো চুক্তি করলেও তা আমাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই হবে।”
হামাসের অবস্থান
হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার দাবি জানিয়েছি এবং আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। নতুন করে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না, যদি না আমাদের পূর্বশর্ত মানা হয়।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসরসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গাজায় চলমান সংঘাতে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, মানবিক সহায়তা না পৌঁছালে গাজার জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতির এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান না আসে, তাহলে সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
আগামী দিনগুলোতে কাতারে এই আলোচনার ফলাফল আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।