অর্থনীতি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবৃদ্ধিসহ সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি জানিয়েছেন, গত এক বছরে দুই দেশের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করলে উভয় দেশ লাভবান হবে।

ভারত-চীন সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর থেকেই ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতি লাভ করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মনে করেন, আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারত ও চীনকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতি যদি একসঙ্গে কাজ করে, তবে তা শুধু তাদের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিবাচক হবে।”

‘হাতি’ ও ‘ড্রাগন’-এর সহযোগিতার উপমা

ওয়াং ই দুই দেশের সম্পর্ক বোঝাতে ‘হাতি’ ও ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, “ড্রাগন ও হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই না করে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার দিকে নজর দিতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করেছিল। ২০১৮ সালে চীনের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর তা দ্বিগুণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর ফলে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম না নিলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাণিজ্যযুদ্ধ এবং আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে ভারত ও চীনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ভারত-চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা

বর্তমানে ভারত ও চীনের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চীনের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনিকস, টেলিকম যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক দ্রব্য অন্যতম। অন্যদিকে, ভারত থেকে চীনে প্রধানত কাঁচামাল, ওষুধ ও কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হয়।

ওয়াং ই আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে ভারত ও চীনের মধ্যে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত, মহামারির পর স্বাস্থ্যসেবা ও টেকনোলজির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সীমান্ত বিরোধ ও রাজনৈতিক সমঝোতার প্রেক্ষাপট

ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্ত বিরোধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ওয়াং ই বলেন, “আমাদের পারস্পরিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত ও চীন যদি কৌশলগত আস্থা বৃদ্ধি করে, তাহলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।”

উপসংহার

ভারত ও চীনের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থার ওপর। দুই দেশ যদি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে একে অপরের সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করে, তবে তা শুধুমাত্র এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট—বাণিজ্য ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়িয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই ভবিষ্যতের পথ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button