ছয় মাসে ব্যাংক থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার

সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে ব্যাংক খাত থেকে সরকার নিট ৬ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ফলে গত ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণের পরিসংখ্যান
শুধুমাত্র ব্যাংক নয়, সরকার ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকেও ঋণ গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকে ২৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ৩১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ গুণ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৫৬ কোটি টাকা।
ঋণ বৃদ্ধির কারণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া ঋণের পরিশোধের জন্যই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর সরকারের নির্ভরতা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোনো নতুন ঋণ নেয়নি; বরং জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।
সরকার চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সার ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরে এই খাতে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ বৃদ্ধির কারণ
সরকারি সিকিউরিটিজে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ২৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা নতুন ঋণ নেওয়ার ফলে সরকারের মোট ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, সাধারণত সরকার সঞ্চয়পত্র ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে পারেনি, বরং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে গেছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
সরকারের ঋণ পরিকল্পনা
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, সরকার পুরো অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে সরকার ২৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে।
সমাপ্তি
সরকারের ঋণ গ্রহণের এই বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণ বৃদ্ধি পেলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমতে পারে, যা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে করলে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। আগামী দিনে সরকারের ঋণ নীতির দিকনির্দেশনা কী হবে, সেটি নির্ভর করবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর।