আঞ্চলিক

ছিনতাইকারীদের হামলায় ঢাবি অধ্যাপক, জানালেন ভয়ানক অভিজ্ঞতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গত ১৫ জানুয়ারি রাতে টেকনিক্যাল মোড় থেকে ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় আসার সময় সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তিনি পেশাগত কাজে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং কাজ শেষে পরদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত ১০টা ৫ মিনিটে বাস থেকে নামার পর তিনি একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঠিক করেন।

সংঘর্ষের শুরু

অটোরিকশাটি যখন জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট পার হয়ে গণভবনের সামনে আসে, তখন রাত ১০টা ৫৫ মিনিট। হঠাৎ গাড়িটি থেমে যায়। অধ্যাপক চালককে জিজ্ঞাসা করেন, “কী হয়েছে?” চালক জানায়, ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ সময় তিনজন ব্যক্তি অটোরিকশার দরজা খুলে অধ্যাপকের পাশে বসেন। একজন তাঁর মুখ চেপে ধরেন এবং আরেকজন গলায় ধারালো চাকু ধরে বলেন, “তুই চিৎকার করলে গলা কেটে নামিয়ে দেব।” ভয়ে অধ্যাপক চোখ বন্ধ করেন।

ছিনতাইয়ের ভয়াবহতা

ছিনতাইকারীরা প্রথমে অধ্যাপকের মুঠোফোনটি কেড়ে নেয় এবং এরপর তাঁর কোলে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। এক ছিনতাইকারী বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, তোর কাছে পাঁচ লাখ টাকা আছে। টাকাগুলো কোথায়?” অধ্যাপক ভয়ে বলেন, তিনি একজন শিক্ষক এবং তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা নেই। তখন আরেকজন ছিনতাইকারী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “তুই এখনই দুই লাখ টাকা দিবি, নইলে তোর গলা কেটে দেব।”

অধ্যাপক তখন ছিনতাইকারীদের কাছে তাঁর এক আত্মীয়কে ফোন করেন এবং বলেন, “আমি একটা বিকাশ নম্বর দিচ্ছি। এখনই এক লাখ বিকাশ করো।” বিকাশে টাকা আসার পর অধ্যাপক ছিনতাইকারীদের বলেন, “ভাই, আপনারা তো টাকা পেয়েছেন। এবার আমাকে ছেড়ে দেন।”

মুক্তির পর পরিস্থিতি

ছিনতাইকারীরা অধ্যাপককে সংসদ ভবনের সামনে নামিয়ে দেয় এবং তাঁকে পেছনে ফিরে না তাকানোর নির্দেশ দেয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অধ্যাপককে জিম্মি করে রাখা হয়। তিনি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, পকেটে কোনো টাকা নেই। পরে তিনি একটি রিকশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

অধ্যাপক জানান, এ ঘটনায় তিনি বেশ কয়েক দিন মানসিক সমস্যায় ভুগেছেন। তিনি বলেন, “যখন আমি ছিনতাইকারীদের হাতে আটক হলাম, তখন আমার মাথায় কেবল মৃত্যুচিন্তা ভর করেছিল। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে সক্ষম হই।”

পুলিশি ব্যবস্থা

অধ্যাপক শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমি মামলায় ছিনতাইকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বর উল্লেখ করেছিলাম। কেন পুলিশ ছিনতাইকারীদের ধরতে পারছে না, সেটি বোধগম্য নয়।”

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আযম বলেন, “স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্যারকে জিম্মি করে যারা টাকা আদায় করেছে, তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মনে করেন, নাগরিকের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। তিনি বলেন, “যদি নাগরিকের মনে আতঙ্ক থাকে, চলাচল করতে ভয় পান, সেটি উদ্বেগজনক।” ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “সংঘবদ্ধ যে ছিনতাইকারীরা আমাকে জিম্মি করে টাকা আদায় করল, তারা যদি বিচারের আওতায় না আসে, তাহলে একই অপরাধ করতেই থাকবে।”

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button