হামাস ও আমেরিকার সরাসরি সংলাপ – নতুন সমাধানের ইঙ্গিত

গত ১৭ মাসের বেশিরভাগ সময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের চেয়ে গাজা যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধানের ধারণা বেশি আলোচিত হয়েছে। তবে বাস্তবতা থেকে এই ধারণা অনেক দূরে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযানে গাজায় প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধলাখ মানুষের।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা ‘দুর্বল হয়ে গেছেন ও মুষড়ে পড়েছেন’ বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবারই সশস্ত্র সংগঠনটিকে ‘নির্মূল করার’ অঙ্গীকার করেছেন। তবে গাজায় ‘পরিপূর্ণ বিজয়’ অর্জন করা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
মার্কিন সরকারের পরিবর্তিত নীতি
গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অধিকতর বাস্তব কিছু অর্জনে সমঝোতায় আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, তাঁর সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের কাছে সন্ত্রাসী বলে বিবেচিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করার নীতি থেকে সরে আসছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেছেন, “(গাজা যুদ্ধ অবসানে) সমঝোতায় নিযুক্ত মার্কিন বিশেষ দূতের যে কারও সঙ্গে কথা বলার কর্তৃত্ব রয়েছে।”
হামাসের দাবি
মার্কিন সরকার এখন জানতে চায়, নিজেদের কাছে থাকা ৫৯ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে হামাস কী চায়। এই জিম্মিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন মার্কিন নাগরিক আছেন।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম আল আরাবিয়া টেলিভিশনে বলেছেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলছি, পরবর্তী দফায় গাজায় রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বন্দোবস্তের অংশ হওয়া হামাসের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নয়।”
গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা করা সাম্প্রতিক পরিকল্পনার জবাবে আরব নেতারা নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। প্রস্তাবে গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, যেখানে হামাস থাকবে না।
অস্ত্র সমর্পণের প্রশ্ন
চলতি সংকটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, হামাস কি নিরস্ত্র হবে? প্রবীণ ইসরায়েলি মধ্যস্থতাকারী গারশন বাস্কিন সম্প্রতি বলেছেন, “আমি জানি, এ বিষয়ে বিদেশে হামাস নেতাদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে এবং এ নিয়ে তাঁরা বিভক্ত।”
হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, “হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে—এ ধারণা একটি রেডলাইন এবং এটি আলোচনা বা সমঝোতা করার জন্য উপযুক্ত নয়।”
ইসরায়েলি নেতাদের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামাসের সঙ্গে আলোচনা করছে, বিষয়টি উদ্ঘাটিত হওয়ার পর ট্রাম্প সংগঠনটির সঙ্গে কী সমঝোতা করতে পারেন, তা নিয়ে ইসরায়েলি নেতারা স্পষ্টতই স্নায়ুবিক চাপে ভুগছেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ নিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে, তবে সেখানে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি।
হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা একটি নতুন রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি করতে পারে। তবে এই আলোচনার ফলাফল এবং হামাসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প কতদূর এগোতে পারেন এবং এই পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তিত হয়।