বাংলাদেশ

৬ মাসে পুলিশের ওপর ২২৫ হামলা, ‘মব’ নিয়ে উদ্বেগ

গত ছয় মাসে পুলিশের ওপর ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব হামলার বেশিরভাগই সংঘবদ্ধ জনতার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, যা ‘মব’ তৈরির মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে।

পতেঙ্গার হামলার ঘটনা

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মারধর করা হয়। হামলাকারীরা তাকে ‘ভুয়া পুলিশ’ অপবাদ দিয়ে আক্রমণ করে এবং তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়। হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় ইউসুফ আলী অসহায় অবস্থায় কাঁদছেন। তিনি বলেন, “যখন পুলিশের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে, তখন আর আবেগ ধরে রাখতে পারিনি।”

হামলার পরিসংখ্যান

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে পুলিশের ওপর হামলার ২২৫টি ঘটনার মধ্যে ৭০টি বড় ধরনের আলোচনা তৈরি করেছে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসিক ভিত্তিতে হামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৪, ৩৪, ৪৯, ৪৩, ৩৮ এবং ৩৭।

মব তৈরির প্রভাব

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ হামলা সংঘবদ্ধ জনতার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং পেশাদার অপরাধীরা মব তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এই মব শুধু পুলিশের ওপর হামলা করছে না, বরং সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে।

গণপিটুনির ঘটনা

গত সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ৩ মার্চ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা এলাকায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাত সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

পুলিশ সদস্যরা বলছেন, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর পুলিশে ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়েছে। নতুন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পুলিশ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন হামলার ঘটনা তাদের মনোবলের ওপর বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।”

আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা

শুধু হামলার ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা এবং আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

রাজনৈতিক প্রভাব

বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের ২০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব ঘটনার মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং মাদক কারবারিরা জড়িত ছিলেন।

অপরাধবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা পুলিশকে ভয় না পেলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, মাদক কারবারিরা যখন মব তৈরি করে পুলিশের ওপর হামলা করে, তখন এটি উদ্বেগের বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, “পুলিশকে আরও কঠোর হতে হবে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button