বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও আলোচনার মূল বিষয়
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জয়শঙ্কর তাঁদের আলোচনার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ইউক্রেন সংঘাত, পশ্চিম এশিয়া, বাংলাদেশ, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন। জয়শঙ্কর লেখেন, “অনিশ্চিত ও অস্থির বিশ্বে ভারত-যুক্তরাজ্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে অবদান রাখছে।”
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
যদিও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি জয়শঙ্কর, তবুও ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তাঁদের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণের গুঞ্জন ওঠে। পরবর্তীতে জানা যায়, তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। তবে ব্রিটিশ সরকার তখন জানিয়েছিল, ওই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মতো কোনো আইন তাদের নেই।
দ্য হিন্দু-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির একজন এমপি ছিলেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি সিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন, কিন্তু কিছু অভিযোগের কারণে পদত্যাগ করেন।
ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক ও কৌশলগত পরিকল্পনা
যুক্তরাজ্যের চেভেনিং হাউসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সমন্বয়, রাজনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য চুক্তি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, যোগাযোগ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। জয়শঙ্করের স্ত্রী কিয়োকো জয়শঙ্কর ও ল্যামির স্ত্রী নিকোলা গ্রিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর এক্সে পোস্ট করে লেখেন, “আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কৌশলগত সমন্বয়, রাজনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য চুক্তি, শিক্ষা ও প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে অগ্রগতির বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ
বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ ও সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন রাশিয়া-ইউক্রেন নীতি পরিবর্তন করে। এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্বে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেও ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উপসংহার
ভারত ও যুক্তরাজ্যের এই বৈঠক নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মজবুত করার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাঁদের আলোচনা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এখনো এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো সরকারি বিবৃতি পাওয়া যায়নি।