খেলাক্রিকেট

প্রোটিয়াদের স্বপ্নভঙ্গ: চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা ৫০ রানের ব্যবধানে জয়ী হয়ে পৌঁছে গেছে আসরের ফাইনালে। ৩৬৩ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩১২ রানেই অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রথম ইনিংস: কিউইদের ব্যাটিং ঝড়

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। কিউই ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে। ইনিংসের শুরুতেই রাচিন রবীন্দ্র ও ডেভন কনওয়ের ব্যাটে ভর করে দ্রুত রান তোলে দলটি। তবে ৩২ রানে কনওয়ে আউট হয়ে গেলে দলীয় হাল ধরেন রাচিন রবীন্দ্র ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

দুজন মিলে গড়েন ১৬৪ রানের দারুণ এক জুটি। রবীন্দ্র তুলে নেন দুর্দান্ত শতক, ১০৮ রান করে রাবাদার বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। অন্যদিকে, উইলিয়ামসনও দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন। তার ব্যাট থেকে আসে ১০২ রান। শেষদিকে গ্লেন ফিলিপস ৪৯ ও মাইকেল ব্রেসওয়েল ১৬ রান করেন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ৩৬২ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন লুঙ্গি এনগিডি, যিনি ৩টি উইকেট নেন। কাগিসো রাবাদা পান ২ উইকেট। তবে তাদের বোলিং পারফরম্যান্স নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং দাপটের সামনে খুব একটা কার্যকর হয়নি।

দ্বিতীয় ইনিংস: দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতার গল্প

৩৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ১৭ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওপেনার রায়ান রিকেল্টন, ম্যাট হেনরির বলে মাইকেল ব্রেসওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। এরপর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও ফন ডুসেন মিলে জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন।

তারা দুজনে মিলে গড়েন ১০৫ রানের জুটি। তবে অর্ধশতক পূরণ করার পরই বাভুমা ৫৬ রানে স্যান্টনারের বলে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন। এরপর বেশি সময় টিকতে পারেননি ফন ডুসেনও। ৬৯ রান করে তিনিও স্যান্টনারের শিকার হন।

এই দুই উইকেট হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ যেন ভেঙে পড়ে। নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকায় ম্যাচের রাশ চলে যায় নিউজিল্যান্ডের হাতে। দলীয় স্কোরে ৫৭ রান যোগ করতেই একে একে বিদায় নেন ক্লাসেন (৩), মার্করাম (৩১), মুল্ডার (৮), জানসেন (৩) ও কেশব মহারাজ (১)।

তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান অভিজ্ঞ ডেভিড মিলার। তার ব্যাট থেকে আসে ১০২ রানের অসাধারণ ইনিংস। কিন্তু সঙ্গীদের নিয়মিত বিদায়ে তিনি দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি। শেষদিকে রাবাদা ১৬ রান করলেও তা যথেষ্ট হয়নি। ৪৯তম ওভারে ৩১২ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ফলে ৫০ রানের ব্যবধানে ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় তারা।

নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত বোলিং

কিউইদের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন মিচেল স্যান্টনার, যিনি ৪৩ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া গ্লেন ফিলিপস ও ম্যাট হেনরি ২টি করে উইকেট পান। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে।

অতীতের পুনরাবৃত্তি: আবারও স্বপ্নভঙ্গ প্রোটিয়াদের

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতা যেন তাদের জন্য এক নিয়মিত ঘটনার পরিণত হয়েছে। বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে তারা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ড্র করে বিদায় নেওয়া, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়া—এসব ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল এবারও।

ফাইনালে ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বৈরথ

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড শেষবার ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠেছিল, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। এবার তারা শিরোপার খরা কাটাতে মরিয়া। অন্যদিকে, ভারত ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হলেও ২০১৭ সালে পাকিস্তানের কাছে ফাইনালে পরাজিত হয়। টানা তিনবার ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার তারা মাঠে নামবে।

এখন দেখার বিষয়, নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিততে পারে কিনা, নাকি ভারত আরও একটি বড় টুর্নামেন্টের ট্রফি ঘরে তুলবে। ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় রয়েছেন এক মহারণের।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button