বানিজ্য

অবশেষে মেলায় বই বিক্রির হিসাব জানালো বাংলা একাডেমি

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ শেষ হয়েছে গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। তবে বইমেলায় মোট কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে, তা নিয়ে ছিল বিভ্রান্তি।

অবশেষে বইমেলা শেষ হওয়ার চারদিন পর বই বিক্রির হিসাব দিয়েছে বাংলা একাডেমি। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় একাডেমির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে বই বিক্রির হিসাব প্রকাশ করা হয়।

বই বিক্রির পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, অমর একুশে বইমেলায় এবার অংশ নেয়া ৭০৩টি প্রকাশনীর মধ্যে ৩৫১টি প্রকাশনীর বই বিক্রির হিসাব পেয়েছে বাংলা একাডেমি। তাদের বিক্রির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। তবে বাকি প্রকাশনীগুলোর বই বিক্রিসহ মোট পরিমাণ আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করছে বাংলা একাডেমি।

এদিকে, একাডেমি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় মোট বই বিক্রির পরিমাণ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি দেখা গিয়েছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রতিবেদনে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৬১ লাখ বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সে সংখ্যাকে মেলার মোট বিক্রির পরিমাণ ধরে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

বিগত বছরের তুলনায় বিক্রির প্রবণতা

বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এবার মেলা শেষে বাংলা একাডেমির মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৩ টাকা। তবে মেলায় আগের বছরগুলোর এবং এ বছরের বই বিক্রির হিসাব মূলত প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে করা আনুমানিক হিসাব।

গত বছরের তুলনায় বই বিক্রি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪ সালের বইমেলায় আনুমানিক ৩৮ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকাশক ও পাঠকদের প্রতিক্রিয়া

বই বিক্রির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশের পর প্রকাশক এবং পাঠকদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র ছিল। অনেক প্রকাশক মনে করেন, প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রির হিসাব প্রদান করেননি।

একজন প্রকাশক বলেন, “আমাদের বিক্রি বেশ ভালোই হয়েছে, কিন্তু আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে হিসাব দেইনি। অনেক ছোট প্রকাশনীরও ভালো বিক্রি হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”

অন্যদিকে, পাঠকরাও মনে করছেন, এবারের মেলায় বই বিক্রির হার সন্তোষজনক ছিল। একজন পাঠক বলেন, “আমি এবার অনেক নতুন লেখকের বই কিনেছি। বিক্রির সংখ্যা যা-ই হোক, বইমেলার প্রতি মানুষের ভালোবাসা বরাবরের মতোই প্রবল ছিল।”

কেন এই হিসাব নিয়ে বিভ্রান্তি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বইমেলার বিক্রির হিসাব সংগ্রহে স্বচ্ছতা এবং একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। অনেক প্রকাশক তাদের বিক্রির তথ্য প্রদান না করায়, বাংলা একাডেমি শুধুমাত্র আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে আনুমানিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে বাধ্য হয়।

একজন বইমেলা বিশ্লেষক বলেন, “প্রকাশনাগুলোর কাছ থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহে বাংলা একাডেমিকে আরও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায়, প্রতি বছর একই বিভ্রান্তি তৈরি হতে থাকবে।”

বইমেলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগামী বছর থেকে বই বিক্রির পরিসংখ্যান আরও নির্ভুলভাবে সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। একাডেমির মহাপরিচালক জানান, “আমরা চাই, মেলার সব প্রকাশকই সঠিক বিক্রির তথ্য আমাদের কাছে জমা দিন, যাতে পরিসংখ্যান আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য হয়।”

এছাড়া আগামী বছর বইমেলায় ডিজিটাল বিক্রির তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি সফটওয়্যার চালু করার বিষয়ে ভাবছে বাংলা একাডেমি।

সংক্ষেপে মূল তথ্য:

  • বাংলা একাডেমির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বইমেলায় আনুমানিক ৪০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
  • ৩৫১টি প্রকাশনীর বিক্রির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।
  • বাংলা একাডেমির নিজস্ব বই বিক্রি হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৩ টাকা।
  • আগামী বছর থেকে বই বিক্রির পরিসংখ্যান সংগ্রহের নতুন পরিকল্পনা করছে বাংলা একাডেমি।

উপসংহার

অমর একুশে বইমেলা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। বই বিক্রির পরিসংখ্যান নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি থাকলেও, বইপ্রেমীদের অংশগ্রহণে এবারের মেলাও ছিল প্রাণবন্ত। আগামী বছর আরও সুসংগঠিতভাবে বই বিক্রির হিসাব সংগ্রহ করা গেলে, এই বিভ্রান্তি দূর হবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button