অর্থনীতি

চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সুপারিশ

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দেশের চারটি স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে। এই স্থলবন্দরগুলো হলো নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ, রাঙামাটির তেগামুখ এবং হবিগঞ্জের বাল্লা।

স্থলবন্দর বন্ধের কারণ

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখ স্থলবন্দরে কোনো অবকাঠামো নেই, যা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরে অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলেও ভারতীয় অংশে অবকাঠামো ও সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এই স্থলবন্দরটি বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়। গত বছরের নভেম্বর মাসে দেশের আটটি স্থলবন্দরের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।

শর্ত সাপেক্ষে চালু রাখার সুপারিশ

কমিটি চারটি স্থলবন্দরকে শর্ত সাপেক্ষে চালু রাখার সুপারিশও করেছে।

১. গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর: ময়মনসিংহ জেলার এই স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 2. নাকুগাঁও স্থলবন্দর: শেরপুরের এই স্থলবন্দরের আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ করে কার্যক্রম গতিশীল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 3. ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর: জামালপুরের এই স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিনিয়োগ বিবেচনায় রেখে ন্যূনতম জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। 4. বিরল স্থলবন্দর: দিনাজপুরের এই স্থলবন্দরে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেলপথে আমদানি-রপ্তানি চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরিদর্শন ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি বিগত সরকারের আমলে নির্মিত অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দরগুলোর বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন।

এই কমিটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ছয় সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সম্প্রতি কমিটি তাদের প্রতিবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়, যেখানে এই সুপারিশগুলো করা হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রভাব

এসব স্থলবন্দর মূলত ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছিল। তবে কার্যকর অবকাঠামো ও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে বেশ কিছু স্থলবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় অংশের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় বাল্লা স্থলবন্দর চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, অন্যান্য স্থলবন্দরেও ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক ও অবকাঠামোগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী:

  • অকার্যকর স্থলবন্দরগুলো বন্ধ করে সরকার যেন আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারে।
  • যেসব স্থলবন্দরে সীমিত কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলোর আয়-ব্যয়ের তুলনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
  • ভারতীয় অংশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কূটনৈতিক আলোচনা ও যৌথ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
  • বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে স্থলবন্দর উন্নয়ন করা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button