বানিজ্য

চীনা কোম্পানির কাছ থেকে কারখানার যন্ত্রপাতি কিনবে আরএফএল

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ চীনের হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর এন পাল এবং হাইতিয়ান গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াং লিনফা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

নতুন কারখানা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা

আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে একটি নতুন কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারখানাটি মূলত রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত থাকবে এবং এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগের অর্থ কারখানার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হবে।

নিজস্ব অর্থায়ন এবং ব্যাংকঋণের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিউরেবল প্লাস্টিকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌকিরুল ইসলাম, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার পোদ্দার, হাইতিয়ান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) লি হুফেংসহ দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আরএফএল গ্রুপের এমডি আর এন পাল। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বেসরকারি বিনিয়োগের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। তবে, এই প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা নতুন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি, যা দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হবে এবং আগামী মে মাসের মধ্যে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। এতে প্রায় ২,৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং রপ্তানি আয় বাড়বে ৪ কোটি ডলার।”

হাইতিয়ান গ্রুপের প্রতিক্রিয়া

হাইতিয়ান গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াং লিনফা বলেন, “এই রপ্তানি আদেশ শুধু সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না। এটি বাংলাদেশে উৎপাদন ক্ষেত্রে অগ্রগতি, দক্ষতা ও টেকসই ব্যবস্থার প্রতিফলন। প্রাণ-আরএফএলের অব্যাহত সাফল্যে অবদান রাখতে পেরে আমরা সম্মানিত।”

আরএফএলের রপ্তানি খাত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আরএফএল গ্রুপের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৭ সালে ভারতকে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ ঘটে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে।

নতুন কারখানা স্থাপনের ফলে এই রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছে কোম্পানিটি। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করা হবে।

উৎপাদনশীলতা ও টেকসই শিল্পায়ন

এই বিনিয়োগ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক প্রসার নয়, বরং দেশের শিল্প উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরিবেশবান্ধব ও উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে তারা আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাবে।

এ প্রসঙ্গে আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, “আমরা শুধু রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই কাজ করছি না, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তির ফলে দেশের প্লাস্টিক শিল্প আরও শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতামূলকভাবে অবস্থান নিতে পারবে।

উপসংহার

চীনের হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে এই চুক্তির মাধ্যমে আরএফএল গ্রুপের শিল্পায়ন ও রপ্তানি কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক দিক নির্দেশনা বহন করছে। আগামী দিনে এই উদ্যোগ আরও বৃহৎ পরিসরে প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button