ইস্টার্ণ ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই মামলা হয়েছে: ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি

ইস্টার্ণ ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) দাবি করেছে, তাদের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জড়িয়ে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী রেজা ইফতেখার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন। তিনি বলেন, একটি গ্রাহকের অবৈধ চাপে নতি স্বীকার না করায় এ ধরনের মামলা করা হয়েছে।
মামলার পটভূমি ও ব্যাংকের অবস্থান
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা মামলাটি ২০১৭ সালে সংঘটিত একটি তহবিল আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেই সময় ব্যাংকের এক শাখার সাবেক কর্মকর্তা কিছু বহিরাগত প্রতারকদের সহায়তায় আর্থিক অনিয়ম করেছিলেন। ইবিএল তখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং দোষী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরবর্তী সময়ে আদালত দোষীদের দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
কিন্তু হঠাৎ করে আট বছর পর, মামলাটি নতুন করে দায়ের করা হয়েছে এবং এতে ইস্টার্ণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা: উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টা
সংবাদ সম্মেলনে ইস্টার্ণ ব্যাংকের লিগ্যাল রিটেইনার ব্যারিস্টার ওমর সাদাত এবং কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান জিয়াউল করিমও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, মামলাটি দায়েরকারী গ্রাহক মুর্তজা আলীর উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। ২০১৭ সালের ঘটনার সময় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ উত্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তিনি নিজের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকের দৈনন্দিন লেনদেনে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো ভূমিকা থাকে না। তা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা।
আইনি প্রতিক্রিয়া ও ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
ইস্টার্ণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ব্যাংক সর্বদা সর্বোচ্চ করপোরেট গভর্নেন্স, স্বচ্ছতা ও আইন মেনে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। কর্মকর্তারা বলেন, ইবিএল আইনানুগ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান, যা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাম্প্রতিক ঘটনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাতের প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের মামলা দেশের ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।
অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের আর্থিক খাতকে সুরক্ষিত রাখতে এবং অবাঞ্ছিত আইনি জটিলতা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইস্টার্ণ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যাতে তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে এবং গ্রাহকরা কোনো ধরনের বিভ্রান্তির শিকার না হন।