১০ বছর কর অবকাশ সুবিধার দাবি রংপুরের ব্যবসায়ীদের

রংপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য ১০ বছর কর অবকাশ-সুবিধা, শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ ১০টি দাবি জানিয়েছে রংপুর চেম্বার অব কমার্স। এসব দাবি আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য উত্থাপন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রংপুর চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
প্রধান দাবিসমূহ:
১. ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা: রংপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
২. বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: রংপুর বিভাগে ৪টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন।
৩. তিস্তা মহাপরিকল্পনা: তিস্তা নদীর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বরাদ্দ প্রদান।
৪. অবকাঠামো উন্নয়ন: রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৬. সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি: রংপুর অঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সম্প্রসারণ।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান: রংপুরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা।
৮. রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ওয়াসা গঠন: উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুসংগঠিত করতে এই সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠা।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
আলোচনায় রংপুর চেম্বারের সভাপতি আকবর আলী বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্য সংকট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাব এবং গ্যাস সরবরাহের সমস্যা উত্তরবঙ্গে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে কুটির শিল্প থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প পর্যন্ত সবাই সংকটে রয়েছে।
খাদ্য উৎপাদনে রংপুরের গুরুত্ব
রংপুর অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচকেরা বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদার ৫০ ভাগ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের ৭০ ভাগ কাঁচামাল এই অঞ্চল থেকে আসে। তবুও এখানকার শিল্পখাত পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত। চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
কর প্রদানে অনীহা ও ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা
কুড়িগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আজিজ মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী কর দিতে চান, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তারা পিছিয়ে থাকেন। কর ব্যবস্থাকে সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করার দাবি জানান তিনি।
গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবদুল লতিফ হাক্কানী বলেন, ‘দেশের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করছে, অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ন্যূনতম পরিমাণ ঋণ পেতেও সমস্যায় পড়ছেন।’
এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতি
প্রধান অতিথি এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য সরকার কর ব্যবস্থাকে সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করতে কাজ করছে। রংপুরের দাবিগুলো বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’
রংপুর চেম্বারের নেতারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করলে উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।