সোনার দাম কমেছে, ভরি এখন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৭ টাকা

দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও কমেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভালো মানের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২,৪০৩ টাকা কমে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৭ টাকা। এই নতুন মূল্য আগামীকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।
সোনার দামের নতুন হার
বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মূল্য অনুযায়ী:
- ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি: ১,৫০,৯৬৭ টাকা
- ২১ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি: ১,৪৪,০৯৭ টাকা
- ১৮ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি: ১,২৩,৫১০ টাকা
- সনাতন পদ্ধতির সোনার প্রতি ভরি: ১,০১,৭২২ টাকা
এদিকে, আজ পর্যন্ত ২২ ক্যারেট সোনা ১,৫৩,৩৭০ টাকায়, ২১ ক্যারেট ১,৪৬,৩৯৫ টাকায়, ১৮ ক্যারেট ১,২৫,৪৮১ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১,০৩,৪০১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে আগামীকাল থেকে প্রতি ভরিতে ২২ ক্যারেটের সোনায় ২,৪০৩ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২,২৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১,৯৭১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনায় ১,৬৭৯ টাকা দাম কমবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দামের ওঠানামা
সোনার বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাজুস সোনার দাম বাড়িয়ে প্রতি ভরি ১,৫৪,৫২৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্য ছিল। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক দফা দাম কমিয়ে প্রতি ভরি ১,৫৩,৩৭০ টাকা করা হয়। আর আজকের ঘোষণায় সেটি আরও কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোনার দামের পরিবর্তনের কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের পরিবর্তন এবং স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যের কারণে সোনার দাম ওঠানামা করছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাস, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা সোনার দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে সোনার বাজার মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকায় দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া, বিয়ের মৌসুম শেষ হওয়ার ফলে সোনার চাহিদাও কিছুটা কমেছে, যা দামের হ্রাসের অন্যতম কারণ হতে পারে।
ভবিষ্যতে সোনার দামের পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সোনার দাম আরও পরিবর্তন হতে পারে। আগামী মাসগুলোতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতা সোনার বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখে থাকেন, তাই বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মুখে পড়লে সোনার চাহিদা আবারও বেড়ে যেতে পারে।
ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
সোনার দাম কমার খবরে সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। বিশেষ করে বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য যারা সোনা কিনতে চান, তারা এই মূল্যহ্রাসকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সোনার দামের এই ওঠানামা ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, ফলে তারা বড় সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় নিতে পারেন।
উপসংহার
সোনার বাজারের এই পরিবর্তন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি এবং স্থানীয় বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করেই আগামী দিনে সোনার মূল্য নির্ধারিত হবে। আপাতত, যারা সোনা কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময় হতে পারে।