বিশ্ব

জার্মানিতে কিভাবে গঠিত হবে জোট সরকার

জার্মানির ২১তম জাতীয় নির্বাচন গত রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কোনো একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, যার ফলে সরকার গঠনের জন্য জোট গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জার্মান রাজনীতিতে এটি নতুন কিছু নয়, কারণ দেশটি দীর্ঘদিন ধরে জোট সরকার পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে।

নির্বাচনের ফলাফল ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান

সর্বশেষ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জার্মান পার্লামেন্টের (বুন্ডেস্ট্যাগ) ৬৩০ আসনের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ ও সিএসইউ) পেয়েছে ২০৮টি আসন, কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) ১৫২টি আসন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ১২০টি আসন, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ৮৫টি আসন এবং বাম দল দ্য লিংকে ৬৪টি আসন পেয়েছে।

ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের প্রধান ফ্রিডরিখ মের্ৎস আগেই জানিয়েছেন যে, তিনি কট্টর ডানপন্থী এএফডির সঙ্গে কোনো ধরনের জোট করবেন না। তার পরিবর্তে, তিনি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং গ্রিন পার্টির সঙ্গে সম্ভাব্য জোট গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

জোট সরকার গঠনের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া

জার্মানির মৌলিক আইন অনুসারে, নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে নতুন পার্লামেন্টের (বুন্ডেস্ট্যাগ) প্রথম অধিবেশন আহ্বান করতে হবে, যা আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে জোট আলোচনার কারণে এটি কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, সর্বাধিক আসন পাওয়া দলকে সরকার গঠনের জন্য জোটসঙ্গী খুঁজতে হবে এবং একটি কার্যকর সরকার পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করতে হবে। এই রূপরেখার ভিত্তিতে জোটের প্রতিটি দল পৃথকভাবে দলীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের সমর্থন নিবে। নতুন চ্যান্সেলর নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ তার পদে বহাল থাকবেন।

যদি জোট আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নির্বাচন হবে না। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন এবং সর্বশেষে আলোচনা ব্যর্থ হলে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে।

জোট আলোচনায় মূল বিষয়গুলো

নতুন সরকার গঠনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচনায় থাকবে, তার মধ্যে রয়েছে:

  1. অভিবাসননীতি:
    • ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করতে চায়, যা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
    • পরিবার পুনর্মিলন সংক্রান্ত নীতিতেও দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
  2. অর্থনীতি ও করনীতি:
    • জার্মানির অর্থনীতি বর্তমানে সংকটের মুখে রয়েছে। দলগুলো একমত যে অর্থনীতিকে চাঙা করতে হবে, তবে করনীতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
    • কর বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে নাকি কর হ্রাস করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
  3. বৈদেশিক ও নিরাপত্তানীতি:
    • ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে কি না এবং এ সহায়তা কিভাবে অর্থায়ন করা হবে, তা বিতর্কের বিষয়।
    • যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ নীতির প্রতি উভয় দলই ইতিবাচক অবস্থান নিলেও নির্দিষ্ট নীতিগত বিষয়গুলো নিয়ে পার্থক্য রয়েছে।
  4. সামাজিক নীতি:
    • সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ঋণ সীমাবদ্ধতা সংশোধনের প্রস্তাব আসতে পারে।
    • নাগরিক ভাতা চালু রাখা হবে নাকি নতুন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
  5. পরিবহননীতি:
    • স্থানীয় ও আঞ্চলিক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে জাতীয় পরিবহন টিকিট ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে কি না, তা আলোচনার বিষয়।
    • রেলওয়ের আধুনিকায়ন এবং কর্মীদের বেতন কাঠামো সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে।

বিরোধী দলের ভূমিকা ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

এবারের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) দলটি ১৫২টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে তারা পার্লামেন্টে জোট সরকারকে নানা চাপে ফেলতে পারে।

নিষ্কর্ষ

জার্মানিতে সরকার গঠনের জন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এবারও দলগুলো জোট গঠনের জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button