অর্থনীতি

অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন, সংকট কাটিয়ে পুনরুদ্ধার: এমসিসি

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যা গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। এই সময় দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে, যদিও মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য কিছু চাপ এখনও বিদ্যমান।

অর্থনীতির স্থিতিশীলতা

এমসিসিআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পতন থেমেছে এবং বাংলাদেশি মুদ্রার দরপতনও বন্ধ হয়েছে। চলতি হিসাবের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি আশাব্যঞ্জক সংকেত। তবে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহের গতি কমে যাওয়া, সরকারি ব্যয় হ্রাস, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়া, বিনিয়োগ পরিস্থিতির অবনতি এবং ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনও রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নীতি

বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে এবং মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। এমসিসিআই মনে করছে, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতির কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে।

প্রবাসী আয় ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবাসী আয় প্রবাহে ২৭.৫৬ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১০.৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে ৩৪৭ কোটি মার্কিন ডলার ঘাটতির পর, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত ৩৩ মিলিয়ন বা ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার হয়েছে।

আর্থিক হিসাবের উন্নতি

এমসিসিআই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে উদ্বৃত্ত ছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে উদ্বৃত্ত বেড়ে ১.৩৮ বিলিয়ন বা ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মূলধন হিসাবও ৩৫.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে উদ্বৃত্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৭ মিলিয়ন বা ২১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর ফলে দেশের সামগ্রিক ভারসাম্যের ঘাটতি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে যা ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার, এবার তা ৩৮ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

আমদানি ও বাণিজ্য ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি বেড়েছে মাত্র ৩.৫৩ শতাংশ। প্রবাসী আয় ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে বেশি হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর সময় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯.৭৬ বিলিয়ন বা ৯৭৬ কোটি মার্কিন ডলার।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক সংকেত। আশা করা হচ্ছে, সরকারের নীতিমালা এবং বাজারের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।

সকল আপডেট পেতে সিগন্যালবিডির সঙ্গে থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button