বানিজ্য

বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা বাড়ছে, সরবরাহ স্বাভাবিকের মতো

Advertisement

বর্তমানে দেশে সয়াবিন তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে সরবরাহ স্বাভাবিকের মতো রয়েছে। সাধারণত, সয়াবিন তেলের মাসিক চাহিদা দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টন হয়ে থাকে। কিন্তু জানুয়ারিতে দেশে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার টন, যা গত ছয় বছরের মধ্যে এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।

আমদানি ও উৎপাদন

গত জানুয়ারিতে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টন। একই সময়ে সয়াবিনবীজের আমদানিও ছিল ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই তেল প্রক্রিয়াজাত করে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বাজারে থাকার কথা ছিল। তবে জানুয়ারির বিপুল আমদানির পরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সংকটের কারণ

তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংকটের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. সুপার পাম তেলের প্রভাব: বাজারে খোলা সয়াবিন তেল হিসেবে যে তেল বিক্রি হয়, তার বড় অংশ সুপার পাম তেল। শীতকালে এই তেল জমাট বেঁধে যায়, ফলে সয়াবিন হিসেবে সুপার পাম তেলের বিক্রি কমে যায় এবং বেড়ে যায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের বিক্রি।
  2. আমদানি কমে যাওয়া: জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ আমদানি হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে আমদানি ছিল খুব কম। এ সময়ে মাত্র ২৫ হাজার টন তেল আমদানি হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারিতে বাজারে তেলের চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু বাড়তি সেই চাহিদা সামাল দেওয়ার মতো ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ধারাবাহিকতা ছিল না।

বাজার পরিস্থিতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে আমদানি করা তেলের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানায় পরিশোধনের জন্য ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল খালাস করেছে। জানুয়ারিতে আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও সয়াবিনবীজ থেকে পরিশোধিত যে তেল পাওয়া গেছে, তা এক মাসের স্বাভাবিক চাহিদার সমান। কিন্তু রমজানকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের মন্তব্য

খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহেদ উল আলম বলেন, “প্রতিবছর শীত মৌসুমে সয়াবিনের চাহিদা বেশি থাকে। এবার রোজার আগে এ চাহিদা আরও বেড়েছে। জানুয়ারির মতো ফেব্রুয়ারিতে আমদানি বাড়তি থাকলে বাজারে তেলের এ সংকট হতো না।”

সংকট কাটানোর আশা

এদিকে, শীত মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে সুপার পাম আবারও সয়াবিন রূপে ফিরতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে। তাই খুব দ্রুত সয়াবিন তেলের সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন পরিশোধন কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা।

টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেলের জাহাজ আসতে শুরু করেছে। গত রোববার বন্দরে আসা একটি জাহাজ থেকে টি কে গ্রুপের সয়াবিন তেল খালাস শুরু হয়েছে। সামনে আরও তেল আসবে। আমাদের আমদানি করা তেল দ্রুত আমরা বাজারে সরবরাহের চেষ্টা করছি। আশা করছি, শিগগিরই বাজারের সংকট কেটে যাবে।”

সয়াবিন তেলের বাজারে চলমান সংকট দ্রুত কাটানোর জন্য ব্যবসায়ীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button