
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পথ রুদ্ধ হয়েছে। টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার স্বপ্ন আর পূর্ণ হলো না, কারণ রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে, এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রর দুর্দান্ত সেঞ্চুরির হাত ধরে বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত হলো।
বাংলাদেশ দলের হতাশা
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত একাধিকবার বলেছিলেন যে, তার দল এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ম্যাচগুলোর শুরু থেকেই যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়ে ওঠে তা হলো, বাংলাদেশের পরিকল্পনা এবং বাস্তবতার মধ্যে বিশাল পার্থক্য ছিল। টুর্নামেন্টের প্রথম থেকেই সেমিফাইনালের রেসে থাকতে না পারা দলটির জন্য একটি বড় হতাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশের ফ্যানরা দলের থেকে আরও ভালো কিছু আশা করেছিল, শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরির কারণে বাংলাদেশকে বাদ পড়তে হয়েছে, আর এই ম্যাচের পর তাদের সঙ্গী হয়েছে পাকিস্তানও। এর মধ্যেই তারা আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে, যা শুধুমাত্র সান্ত্বনার জন্যই।
নিউজিল্যান্ডের জয়
নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। তাদের জয়ের সঙ্গে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলো। তবে, গ্রুপ সেরা হওয়ার জন্য আগামী ২ মার্চ ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়া ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দলই নিজেদের গ্রুপে দুটি ম্যাচে জয়ী হয়েছে, এবং এই ম্যাচটি নিশ্চিত করবে কারা গ্রুপ সেরা হবে।
বাংলাদেশের বোলিং শক্তি
বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শুরুটা ছিল যথেষ্ট ভালো। প্রথম ওভারেই মেডেন ও পরে উইকেট তুলে নিয়ে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় ১৫ রানে নাহিদ রানা দ্বিতীয় উইকেটটি তুলে নেন এবং বাংলাদেশ আশা করছিল যে এই মুহূর্তে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এরপরই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের রঙ।
বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের পরবর্তী অংশে দুর্বলতা ছিল স্পষ্ট। পুরো ইনিংসে তাদের কোনো একটানা চাপ সৃষ্টি করতে না পারা, বিশেষত মেঘলা আবহাওয়ার কারণে বলের গ্রিপ কম হওয়া, তাদের পরিকল্পনাকে কাজে লাগাতে অসুবিধায় পড়েছিল।
রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি
নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র বাংলাদেশের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তিনি ২৩৭ রানের লক্ষ্যে তার দলের হয়ে অপরাজিত ১১২ রান করেন এবং সেঞ্চুরি তুলে নেন। এই ইনিংসটি সাজান ১২টি চার এবং ১টি ছক্কায়।
রাচিনের সঙ্গে শুরুতে ওপেনার ডেভন কনওয়ের ভালো জুটি তৈরি হয়। তৃতীয় উইকেটে এই জুটি ৫৭ রান যোগ করে। এর পরে, টম লাথামের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে আরো ৬০ রান যোগ করেন, আর সেই জুটি ভাঙা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের জন্য।
রাচিনের বিদায়ে যদিও ১২৯ রানের অসাধারণ জুটি ভেঙে যায়, তবুও কিউইরা ম্যাচের জয় নিশ্চিত করে নেয়। পরবর্তীতে গ্লেন ফিলিপস (২১) এবং মিচেল ব্রেসওয়েল (১১) দলের বাকী রান তুলে নেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ধ্বস
অপরদিকে, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংও ছিল একেবারে দুর্বল। টস হেরে ব্যাটিং শুরু করা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক শান্ত ৭৭ রান করে। তবে, তার পরের ব্যাটসম্যানরা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশ মাত্র ২৩৬ রানে অলআউট হয়। শান্ত ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানই ম্যাচে উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। জাকের আলি অনিক ৪৫ রান করেন, কিন্তু বাংলাদেশ দলের মোট রান ২৩৬ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
ব্রেসওয়েলের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং
নিউজিল্যান্ডের ব্রেসওয়েল ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারকে ধ্বংস করেন। ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সব আশা শেষ করে দেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশ ক্রমেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা হারাতে থাকে।
বাংলাদেশের শেষ আশা
বাংলাদেশের সামনে এখন একমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচটি কেবলই সান্ত্বনা লাভের জন্য হবে, কারণ তারা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও সেখানে জয় পেলেও বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশার কোনো সুযোগ থাকবে না।
উপসংহার
বাংলাদেশের জন্য এই টুর্নামেন্ট ছিল হতাশার। দলের খেলোয়াড়রা যতটা প্রত্যাশিত ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতিতে তারা পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি এবং দলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটিং চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে, তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সান্ত্বনার জন্য জয়ের চেষ্টা করবে।