বানিজ্য

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু জুনে

ত্রিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগামী জুন মাসে শুরু হতে যাচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ পাবে। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী এই তথ্য জানান।

বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন দিগন্ত

নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত এই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নেপালের জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, “জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ নেপালের ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ গ্রহণ করবে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।”

এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর নতুন একটি উৎস পাচ্ছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন

নেপালের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, “নেপাল সবসময় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখে। বাংলাদেশ থেকে কৃষিজাত পণ্য আমদানি করে নেপাল। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।”

অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পর্ক আরও গভীর করতে হবে।”

ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মূল দিকগুলো

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এই চুক্তির মাধ্যমে নেপালের জলবিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

চুক্তির প্রধান দিকগুলো হলো:

  • ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ সরবরাহ
  • জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য বিদ্যুৎ রপ্তানি
  • ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন
  • ভবিষ্যতে সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা

বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান শিল্প ও আবাসিক বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নতুন উৎস খুঁজছে। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।

নেপাল মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সমৃদ্ধ দেশ। দেশটিতে প্রায় ৮৩,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও, বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২,২০০ মেগাওয়াট। ফলে নেপাল তাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয় অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। নেপাল থেকে সরবরাহ শুরু হলে বিদ্যুৎ আমদানির আরও একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

এই চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-নেপাল বিদ্যুৎ বাণিজ্যের এই নতুন যাত্রা ভবিষ্যতে আরও প্রসারিত হবে। ইতোমধ্যে দুই দেশ বড় পরিসরে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেল-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে নেপাল থেকে আরও বেশি পরিমাণে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যয় কমে আসবে।”

বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

নেপাল-বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রসার

নেপাল শুধু বিদ্যুৎই নয়, বরং বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ থেকে চাল, ওষুধ, পোশাক ও কৃষিপণ্য নেপালে রপ্তানি করা হয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও সহযোগিতার পরিধি বাড়ানো হবে।”

উপসংহার

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়া শুধু বিদ্যুৎ খাতের জন্য নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার এবং শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button