বানিজ্য

তিন দিনের পোলট্রি মেলা শেষ, হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক সমঝোতা ও আলোচনা

প্রায় ৩০ হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে তিন দিনব্যাপী ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো’ আজ শনিবার শেষ হয়েছে। ঢাকার পূর্বাচলে অবস্থিত বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ মেলায় ২৭টি দেশের দুই শতাধিক কোম্পানি আট শতাধিক স্টলে তাদের পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শন করেছে। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, মেলায় অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে খামারি ও উদ্যোক্তাদের বিপুল পরিমাণ ব্যবসায়িক আলোচনা হয়েছে এবং প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিজনেস ডিল তথা ব্যবসায়িক সমঝোতা ও আলোচনা হয়েছে।

মেলার আয়োজন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে। আয়োজকেরা আশাবাদী যে আগামী দুই বছরে এই মেলার মাধ্যমে বেশ কিছু ছোট-বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যা দেশে নিরাপদ ডিম, মুরগি ও ফিড উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘শূন্য থেকে শুরু করে দেশের পোলট্রি খাতে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০৫০ সাল নাগাদ এই খাত ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হবে। বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্প দক্ষিণ এশিয়ায় অনুকরণীয় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ ও মানুষের প্রয়োজনেই পোলট্রিশিল্পকে টেকসই করতে হবে। খামারগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া খামারের নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। পোলট্রি রিসাইক্লিং আমাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে পারে। এ জন্য প্রযুক্তি আমদানিতে বিশেষ ছাড় এবং শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান জরুরি।’

নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ও টেকসই পোলট্রি খাত

পোলট্রিশিল্পে টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মসিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় ও মাঝারি পোলট্রি খামারগুলোর রুফটপে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলে কয়েক শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। পোলট্রিতে ‘‘নেট জিরো কার্বন’’ নীতিতে কাজ করতে হবে।’

বিপিআইসিসির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ‘ডিম, মুরগি ও পোলট্রিফিড নিরাপদ করতে হলে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট খামারগুলোর আকার বাড়াতে হবে। মাত্র ৫৪ বছরে বছরে মাথাপিছু এক কেজি মুরগির মাংস ও ২০ পিস ডিম থেকে বর্তমানে প্রায় ১০ কেজি মুরগির মাংস ও ১৩৫ পিস ডিমের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এ পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

প্রোটিনের সহজলভ্যতা ও সুষম বণ্টন

শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ‘শুধু প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, বরং সবার জন্য সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।’

ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রমাণিক বলেন, ‘প্রতিদিন জনপ্রতি একটি করে ডিম খেলে দেশের পোলট্রিশিল্পের আকার দ্বিগুণ হবে। মেলাটি মূল শহরের বাইরে অনুষ্ঠিত হলেও খামারি ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। ২০২৭ সালে ১৪তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে।’

সরকারি উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অনেক দূর এগোতে পারব।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্সটেন্স বলেন, ‘বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পের অগ্রগতি ইতিবাচক। নেদারল্যান্ডস সরকার ‘‘পোল্ট্রিটেক বাংলাদেশ’’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা এই শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’

উপসংহার

এই মেলার মাধ্যমে দেশের পোলট্রিশিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ব্যবসায়িক চুক্তির পাশাপাশি প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগও তৈরি হয়েছে। আগামীর দিনগুলোতে পোলট্রিশিল্পের আরও ব্যাপক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button