বিশ্ব

জেলেনস্কি ‘স্বৈরশাসক’, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তাঁর দেশ থাকবে না : ট্রাম্পের মন্তব্য।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “যদি জেলেনস্কি দ্রুত পদক্ষেপ না নেন, তাহলে তাঁর আর কোনো দেশ থাকবে না।” এটি জেলেনস্কির সাথে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিভেদের আরও এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রভাব ফেলতে পারে।

এই মন্তব্যটি ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ এ পোস্ট করা হয়, যেখানে তিনি দাবি করেন, নির্বাচন ছাড়া জেলেনস্কি স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্য ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তার বিষয়ে নতুন একটি আলোচনার সূচনা করেছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে তহবিল ও অস্ত্র সহায়তা প্রদান করছে।

ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এক সময় ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সহায়তা ছিল, কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, যা ইউক্রেনীয় নেতা জেলেনস্কির প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাবের প্রকাশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অবস্থান

২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, জেলেনস্কি ইউক্রেনের জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তবে সম্প্রতি ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নেই, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের জনগণ এবং বিশেষজ্ঞরা জেলেনস্কির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বললেও, ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এটি আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত

ট্রাম্পের বক্তব্যে একদিকে যেমন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে, অন্যদিকে তিনি আবার দাবি করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্ত করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমি মনে করি, আমি এই যুদ্ধ শেষ করতে পারব। আমার মনে হয়, যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা ভালোভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু আমি আজ ইউক্রেনের নেতাদের বলতে শুনেছি, ‘আহা, আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’ ভাল কথা, আমি বলতে চাই, আপনারা সেখানে তিন বছর ছিলেন, আপনাদের এটি শেষ করা উচিত ছিল।”

এছাড়া, ট্রাম্প রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এই মন্তব্য করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার পরিকল্পনা করছেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্পের শান্তির প্রচেষ্টার এক নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে, যেখানে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সহায়তার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেহেতু ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্যগুলি তাদের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উৎস।

এদিকে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন কূটনৈতিক চেষ্টাও চলছে। যদিও যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনও সংকটময়, তবে ইউক্রেনের সরকার ট্রাম্পের মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত

এখন প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের মন্তব্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে। যদি ট্রাম্প আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন, তাহলে তিনি ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে নতুন নীতির প্রবর্তন করতে পারেন, যা যুদ্ধের সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে। তবে, যুদ্ধের অবসান এবং শান্তির প্রক্রিয়া সহজ হবে না, কারণ এর মধ্যে রাশিয়া, ইউক্রেন, এবং আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন স্বার্থ জড়িত রয়েছে।

ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করা। তাছাড়া, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যদি একদিকে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হন, তবে তিনি অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা লাভের চেষ্টা করছেন।

উপসংহার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ট্রাম্পের ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যায়িত করার পর, এখন সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষা করছে এই পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তিত হতে পারে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান কীভাবে সম্ভব হবে। বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং ভবিষ্যতে আরও অশান্তির সঙ্কেত দিচ্ছে, কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এখনও খোলা রয়েছে, যদি ট্রাম্পসহ অন্যান্য বিশ্ব নেতারা এই সংকট সমাধানে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button