বিশ্ব

মস্কো ও ওয়াশিংটনে দ্রুত দূতাবাস সচল করবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া

রিয়াদে, সৌদি আরবের রাজধানীতে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠকটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত প্রথম সরাসরি আলোচনা, যেখানে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং ইউরোপের দেশগুলোও আলোচনায় উপস্থিত ছিল না।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মস্কোর এক শীর্ষ কর্মকর্তা, ইউরি উশাকভ, বলেন, “আমরা যা বলতে চেয়েছিলাম, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচনা হয়েছে। তবে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।”

আলোচনায় অগ্রগতি এবং সম্ভাবনা

এই বৈঠক থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে, তা হল:

  1. দূতাবাস সচল করার প্রক্রিয়া: দুই দেশ ওয়াশিংটন ও মস্কোতে অবস্থিত তাদের দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে এনে দূতাবাসগুলো সচল করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
  2. অর্থনৈতিক সহযোগিতা: দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে পারে।
  3. শান্তি আলোচনা: ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠকটি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “এটি একটি দীর্ঘ এবং কঠিন, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার প্রথম ধাপ। দুই পক্ষই তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী সমাধানে কাজ করতে একমত হয়েছে।”

এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও বৈঠকটি সফল বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে:

  1. দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ: দুই দেশ দ্রুত রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করবে এবং দূতাবাসগুলোর মধ্যে ব্যাংক লেনদেনের প্রতিবন্ধকতা দূর করবে।
  2. ইউক্রেন বিষয়ক আলোচনা: ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একটি সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হবে, যাতে উভয় দেশ তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করবে।
  3. সম্প্রসারণ ও সহযোগিতা: যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা পুনরায় চালু করা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা

এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টস এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসাবে সের্গেই লাভরভ, ইউরি উশাকভ, এবং মস্কোর অর্থনীতিবিষয়ক মধ্যস্থতাকারী কিরিল দমিত্রিয়েভ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ

এই আলোচনা সম্পর্কে রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দমিত্রিয়েভ জানান, “এটি খুবই গঠনমূলক আলোচনা ছিল। আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি এবং সেখানে অনেক ঠাট্টা-তামাশাও হয়েছে।”

তবে, একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর আলোচনা এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই বৈঠকে ইউক্রেন বা ইউরোপের ভূমিকা কি নিশ্চিত ছিল? যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, “ইউক্রেনের স্বার্থের বাইরে তাদেরকে এ প্রক্রিয়ায় ঠেলে দেওয়া হয়নি, বরং তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে।”

রিয়াদ বৈঠক: দীর্ঘ পথ, দীর্ঘ সংগ্রাম

এছাড়া, সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পর আলোচনা শুরু হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষের মতে, এই বৈঠকটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। সৌদি আরবের ভূমিকাও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ছিল, কারণ তারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে চায়।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের বিভিন্ন কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপে অগ্রগতির মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে দূতাবাস পুনঃপ্রবর্তন, শান্তি আলোচনা এবং আরও বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button