২০২৪ সালে বাংলাদেশের এক কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়েছে টিকটক

নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়ে নিয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল সেফটি সামিট’-এ এ তথ্য প্রকাশ করেন টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশন্সের প্রধান ফেরদৌস আল মোত্তাকিন।
তিনি বলেন, “টিকটক নিয়মিত কমিউনিটি গাইডলাইন আপডেট করে এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। ২০২৪ সালে কমিউনিটি গাইডলাইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬.৭ শতাংশ ভিডিও পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে।”
নিরাপত্তার অগ্রাধিকার
ফেরদৌস আল মোত্তাকিন আরও বলেন, “টিকটক ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং কমিউনিটির সাথে ক্রমাগত সহযোগিতা করে আমরা একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।”
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে, তবে সেটি যেন কমিউনিটি গাইডলাইনের আওতার মধ্যে থাকে।”
ডিজিটাল সেফটি সামিট: মূল আলোচ্য বিষয়
বিটিআরসি ও টিকটকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল সেফটি সামিটে অনলাইন নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ডিজিটাল স্বাক্ষরতা, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং ডিজিটাল আচরণ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তার উন্নয়ন মানেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা নয়। বরং এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করার প্রচেষ্টা, যেখানে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন বিকশিত হতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকারক কনটেন্ট ও প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে নিরাপদ থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সহায়ক নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি করা, দায়িত্বশীল উদ্ভাবন ও ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
বিটিআরসির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়ে একটি বিশেষ উপস্থাপনা দেন।
তিনি বলেন, “বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপত্তার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও প্যানেল আলোচনা
সামিটের বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশ নেন।
তারা অনলাইন নিরাপত্তার সর্বোত্তম অনুশীলন, দায়িত্বশীল কনটেন্ট তৈরি এবং সাইবার হুমকি মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করেন।
টিকটকের কমিউনিটি গাইডলাইন প্রয়োগের কার্যকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকটকের কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে প্ল্যাটফর্মে ক্ষতিকারক কনটেন্টের পরিমাণ কমেছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক ভিডিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে।
একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, “টিকটক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ম্যানুয়াল পর্যালোচনার মাধ্যমে ক্ষতিকারক কনটেন্ট শনাক্ত করে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বাংলাদেশে অনলাইন নিরাপত্তা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য বিটিআরসি এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করছে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।