অর্থনীতি

আইএমএফ ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ মার্চে পাওয়া যাচ্ছে না: অর্থ উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ এখনই পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে আগামী জুন মাসে ছাড় হতে পারে।

সোমবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় পিছিয়ে যাচ্ছে।”

কেন পিছিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়?

অর্থ উপদেষ্টার মতে, আইএমএফের শর্ত পূরণে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সময় লাগবে, যা মার্চের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই, আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “মার্চে না, আমরা বলেছি, আমরা একটু অপেক্ষা করবো। দুইটা একসাথে হলে ভালো হয়। আমরা তাদের বলেছি, কিছু কিছু শর্ত আছে যেগুলো আমরা ইমিডিয়েটলি করতে পারবো না। ওরাও সাজেস্ট করেছে, আমরাও সাজেস্ট করেছি।”

ঋণ পেতে বাংলাদেশের সামনে কী শর্ত?

আইএমএফ থেকে এই ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে:

১. বাজেট ঘাটতি কমানো: রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 2. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 3. মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা: ডলার-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে নীতি গ্রহণ করতে হবে। 4. ব্যাংক খাতের সংস্কার: দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নত করা এবং খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে আইএমএফের শর্তের প্রভাব

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফের এসব শর্ত পূরণ করা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এবং ঋণনির্ভরতা কমাতে এই সংস্কারগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, আইএমএফের কঠোর শর্তের কারণে সাধারণ জনগণের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, শর্ত পূরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ভর্তুকি হ্রাস ও কর বৃদ্ধি করা হতে পারে, যা নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব ফেলতে পারে।

আইএমএফের ঋণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০২২ সালে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ধাপে ধাপে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাবে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পেয়েছে। তবে চতুর্থ কিস্তির অর্থ পেতে কিছু বিলম্ব ঘটছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “সরকার আইএমএফের শর্ত পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া, ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ শিগগিরই আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে পারবে এবং আগামী জুন মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হবে।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, রাজস্ব ঘাটতি এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফের ঋণের এই কিস্তিগুলো পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা শক্তিশালী হবে, যা আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়তা করবে। তবে শর্তগুলো পূরণে যদি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে তা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো:

  • আইএমএফের চতুর্থ কিস্তির ৬৪.৫ কোটি ডলার মার্চে না পেয়ে জুনে পাওয়া যেতে পারে।
  • বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করে শর্ত পূরণে কাজ করছে।
  • বাজেট ঘাটতি কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার শর্ত হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
  • শর্ত পূরণে সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি চাপ আসতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
  • আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button