বাংলাদেশ

সাংবাদিকদের স্বৈরাচারের দালালি: শফিকুল আলমের বক্তব্য

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাড়াও গত ১৫ বছরে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাংবাদিকদের একটি দল নিজেদের সুবিধার জন্য দালালি করেছে।” তিনি বলেন, এই সাংবাদিকরা স্বৈরাচারকে স্থায়ী করতে এবং বৈধতা দিতে বয়ান তৈরি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে এবং তাদের অধিকার হরণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় চলছে এবং দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা করার সময় এসেছে।

আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিকদের ভূমিকা ও দালালির অভিযোগ

শফিকুল আলম বলেন, “সাংবাদিকেরা কী ভূমিকা পালন করেন, তা স্পষ্ট। প্রতিটি দালালি নথিভুক্ত হয়ে গেছে। ১-৩৬ জুলাই ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বড় বড় ঘটনার বয়ান তৈরি করেছে এই দালালরা।” তিনি উল্লেখ করেন, বড় কোনো ঘটনার সময় ফেসবুকে একটি বড় গ্রুপ এবং সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ বয়ান তৈরি করত, যা ঘটনার বৈধতা দিত। এর মাধ্যমে স্বৈরাচারকে স্থায়ী করা হয়েছে এবং মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গণমাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল। মেধা এবং সাংবাদিকতার দক্ষতা মুখ্য বিষয় ছিল না, বরং ব্যক্তিজীবন এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নেওয়া হতো।”

গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের অবদান

শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকেই এখন মানসিক আঘাতগ্রস্ত। তবে দেশের অনেক পত্রিকা এবং সাংবাদিক ভালো ভূমিকা রেখেছেন।” তিনি সাংবাদিকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও তারা সাংবাদিকতা করেছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছেন।”

গবেষণার আহ্বান

বিগত সরকারের সময়ে সাংবাদিকতার ওপর গবেষণা করার আহ্বান জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “যদি গবেষণা সরকারি উদ্যোগে হয়, তবে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হবে। তাই বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা করা উচিত।”

স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা

শফিকুল আলম বলেন, “এখন স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে। আমাদের এমন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে কেউ দালালি করবে না। নতুন বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সমালোচনার সাংবাদিকতা করতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, “সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যাবে এবং প্রমাণসহ যাকে ইচ্ছা সমালোচনা করা যাবে।”

তিনি জানান, “এ মাসের শেষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে।”

আলোচনা সভার অন্যান্য বক্তব্য

আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দাবি হচ্ছে, একটি গণমাধ্যমও বন্ধ হবে না, কিন্তু গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসর থাকবে না।” তিনি আরও বলেন, “এখনো কিছু গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।”

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র প্লাবন তারিক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, প্ল্যাটফর্মটি ১-৩৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শতাধিক সংবাদ-সম্পাদীয়কে পর্যালোচনা করেছে।

এই আলোচনা সভা থেকে স্পষ্ট হলো, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে হলে সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকদের উচিত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে কাজ করা, যাতে তারা কখনো দালালি না করেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button