এবার বিমা দিবস পালন করবে না সরকার: নেপথ্য কারণ ও প্রভাব

জাতীয় বিমা দিবস, যা প্রতি বছর ১ মার্চ পালিত হয়ে আসছে, এবার অনুষ্ঠিত হবে না। পাঁচ বছর ধরে এই দিবসটি পালন করা হলেও, এবার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আয়োজন করা হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে এই দিবসের আয়োজন করে থাকে। তবে এবারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছে।
বাতিলের কারণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দুই মাস আগে বিমা খাতের মালিকপক্ষের সমিতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিআইএ) একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। চিঠিতে বিমা দিবসের প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠক আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এখন ১৫ দিন বাকি থাকলেও, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএ এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আবদুর রশীদ জানান, “সব জাতীয় দিবস এবার পালন করা হবে না। যেগুলো না করলেই নয়, শুধু সেগুলো পালন করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “মৌখিকভাবে আয়োজকদের জানানো হয়েছে।”
ইতিহাস ও গুরুত্ব
জাতীয় বিমা দিবস ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত হয়। এই দিবসটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং পরে ২০২৩ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই তারিখটিকে স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় বিমা দিবস ঘোষণা করেছিল।
গত পাঁচ বছরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্য বজায় থাকছে না।
বিমা খাতের অবস্থা
বাংলাদেশে বর্তমানে ৮২টি বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি জীবনবিমা এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিমা খাতের অবদান মাত্র ০.৪৬ শতাংশ, যা ভারতে ৪.২ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ০.৯১ শতাংশ। আইডিআরএর তথ্যানুসারে, দেশে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বিমার আওতায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বেসরকারি জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৮ কোটি টাকা, আর সম্পদের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। বেসরকারি নন–লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় ছিল ৪ হাজার ১৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বিমা দিবসের গুরুত্ব
বিমা দিবসের আয়োজন না থাকলেও, বিমা খাতের মালিকপক্ষের সমিতি বিআইএ এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সমিতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে আইডিআরএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মনে করেন, বিমা দিবস পালন করা উচিত। কারণ, বিমা খাতে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে অনেকেই বিমা সম্পর্কে সচেতন হন এবং কোম্পানিগুলো সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।
জাতীয় বিমা দিবসের আয়োজন বাতিল হওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা। এটি বিমা খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, কারণ এই দিবসটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর একটি সুযোগ। সরকারের উচিত বিমা খাতের উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বিমা দিবসের আয়োজন আবার শুরু হবে এবং এটি দেশের বিমা খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে।