ভ্যান্সের বক্তব্যে – চীন ও রাশিয়ার হুমকি নয়, নিজেদের ভেতর থেকেই আসছে বিপদ

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি চীন ও রাশিয়া থেকে আসছে না, বরং এটি নিজেদের ভেতর থেকেই আসছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ভ্যান্সের বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে সম্ভাব্য আলোচনার কথা। তবে, তিনি অধিকাংশ সময় ইউরোপের সরকারগুলোকে দোষারোপ করেন। ভ্যান্সের অভিযোগ, ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলো তাদের মৌলিক মূল্যবোধ থেকে সরে আসছে এবং অভিবাসন ও বাক্স্বাধীনতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ রয়েছে।
ভ্যান্সের বক্তব্যে নীরবতা
ভ্যান্স যখন ইউরোপের সমালোচনা করছিলেন, তখন সম্মেলনে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। পরে সম্মেলনে উপস্থিত কয়েকজন রাজনীতিবিদ তার এই অভিযোগের সমালোচনা করেন। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, “এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব
ভ্যান্সের বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপ নিয়ে মনোভাব পুনর্ব্যক্ত হয়। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একটি যুক্তিসংগত সমাধান সম্ভব হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
অভিবাসন ও বাক্স্বাধীনতা
ভ্যান্স অভিযোগ করেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনাররা বাক্স্বাধীনতা দমন করছেন এবং ইউরোপীয় নেতারা মৌলিক মূল্যবোধ থেকে পিছু হটেছেন। তিনি ইউরোপকে ব্যাপক অভিবাসনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন।
ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস ভ্যান্সের বক্তব্যকে ইউরোপের সঙ্গে ‘লড়াইয়ের চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
মস্কোয় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল ভ্যান্সের মন্তব্যকে অবমাননাকর বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি বাস্তবিক অভিজ্ঞতার আলোকে সত্য নয়।
রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী
রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল সিওলাকু বলেন, তাঁর দেশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক। তিনি বলেন, রোমানিয়ার সব কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ও ভোটদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক
সম্মেলনের ফাঁকে জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই নেতা রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের ওপর আলোকপাত করেন এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
ভ্যান্সের বক্তব্য ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। তিনি যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা ইউরোপের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের দেশগুলোকে নিজেদের মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে হবে এবং অভিবাসন ও বাক্স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।